অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: বন্ধু বলতে গাছই। আর গাছ দিয়ে ঘেরা সাজানো সেই বাগান যেন ছোট্ট একটা ক্লাব ঘর। বিকেল হলে সেখানে আড্ডা জমে গোলাপ, জুঁই, চন্দ্রমল্লিকা কিংবা নানা সবজি বা ফলের গাছের সঙ্গে। দিনের শেষটা ভালই কাটে বেশ। সবুজের স্নিগ্ধতা যেন তাঁর ক্লান্তি ধুইয়ে দেয়। মরমী ছোঁয়া পেয়ে পাতা, ফুলেরা আরও যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
তিনি স্বপ্না বর বিশ্বাস। খড়গপুরের এই বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। ছোটবেলা থেকেই সাজানো বাগান তৈরির খুব শখ। সেইমত কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের বাড়ির ছাদেই দিনের-পর-দিন গাছের পরিচর্যা করেছেন। এই করতে করতেই জুঁই, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা হয়ে উঠেছে তাঁর বন্ধু। কুমড়ো, লঙ্কা, আঙুর, আনারস, স্ট্রবেরি গাছের সঙ্গে দিব্যি জমেছে আলাপচারিতা। দৈনন্দিন রুটিন একেবারে বাঁধা। সকাল থেকে ঘরের কাজ সেরে দুই ছেলেকে দেখভাল করে স্কুলে যেতে হয়। বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেই স্বপ্নাদেবী ছুটে যান তাঁর গাছবন্ধুদের কাছে, বাগানে। শীতল জলে স্নান করিয়ে দেন তাদের, ঘাসজমিতে সার দিয়ে ওদের থাকার জমি আরও উর্বর করে দেন। এসবই চলে দীর্ঘক্ষণ ধরে। কোন গাছের পাতা কতটা সতেজ হয়ে উঠল, কোন গাছে কটা কুঁড়ি এল, কোন ফুল শুকিয়ে এল – কোনও কিছুই তাঁর চোখ এড়ায় না।
স্বপ্নার সাজানো বাগানে সদস্য সংখ্যা একশোরও বেশি। অন্য দিনগুলোয় ইচ্ছে থাকলেও রোজ ওদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো যায় না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন সেই সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে স্বপ্নার কাছে। এই সময়ে সংসার সামলে বাড়তি পরিচর্যা চলে গাছেদের। আশেপাশের পরিবেশ আরও মুক্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে সকাল-বিকেল এখানেই ভিড় জমাচ্ছে নানান প্রজাতির পাখিরা। ইতিমধ্যেই স্বপ্নাদেবীর সাজানো ফুল-ফল গাছের ক্লাবঘরে নতুন ঘর বেঁধেছে ছোট টুনটুনি। দিব্যি তাদের নিয়ে দিন কেটে যায়। একে অপরের সঙ্গে ভিন্ন ভাষায় কত যে কথোপকথন চলে, তার ঠিক নেই।
কিন্তু তাঁর এই জগৎও যে বড় ছোট! সেটাই আক্ষেপের। একদিকে জায়গা কম, অন্যদিকে ইচ্ছা বড়ই বালাই। তাই যৎসামান্য আয়োজনে, বাগানের ছোট পরিসরেই দিনের পর দিন সবুজের সঙ্গে সখ্য জমিয়েছেন তিনি। স্বপ্নাদেবী মনে করেন, মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু গাছই। আর তাই কমবেশি বাগান করা দরকার সকলেরই। একহাতে সংসার, অপর হাতে স্কুল আর সবশেষে ছোট বাগানের শতাধিক বন্ধুর সঙ্গে যেমন দিব্যি দিন কাটছে এই শিক্ষিকার। স্বপ্নার স্বপ্ন এখন আর স্রেফ ঘুমের ভিতরে ভেসে ওঠা অবস্থায় নেই, তা হয়ে উঠেছে একেবারে মাটির কাছে থাকা বাস্তব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.