রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের অধীনস্থ কালচিনির (Kalchini) শিকারি গেটের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় তিন হাতির মৃত্যুর ঘটনা গড়াল আদালতের দোরগোড়ায়। এনিয়ে গ্রিন ট্রাইবুনাল (National Green Tribunal) বা পরিবেশ আদালতে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজ্যের বন্যপ্রাণ বিভাগের প্রধান মুখ্য বনপাল, বক্সার ফিল্ড ডিরেক্টর, রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার ও কেন্দ্রে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগকে পার্টি করা হয়েছে এই মামলা। প্রত্যেক পক্ষকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ গ্রিন ট্রাইবুনালে। কলকাতায় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে এই মামলা চলছে।
গত ২৭ নভেম্বর, সোমবার রাজাভাতখাওয়া এবং কালচিনি স্টেশনের মধ্যে দিয়ে গুয়াহাটি-শিলিগুড়িগামী একটি ট্রেন রেলট্র্যাক অতিক্রম করার সময় একপাল হাতি ট্রেনের সামনে পড়ে। তার মধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় তিনটি হাতি (Elephants), যার মধ্যে একটি প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হাতি, দুটি ছোট হাতি পড়ে যায়। পরে তিনটি হাতিরই মৃত্যু হয়। মহিলা হাতিটি ট্র্যাকের প্রায় ২০ ফুট পশ্চিমে ছিটকে যায়। শাবকটি ১৫ ফুট পূর্বে পড়ে এবং আরেকটি হাতির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে যায়। এনিয়ে বক্সা ব্যঘ্র ফিল্ড ডিরেক্টর বলেছেন, “তর্ক যাই হোক না কেন, ট্রেনের গতি যে খুব বেশি ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
এনএফ রেলওয়ের (NFR) সিআরপিও-র মন্তব্য, “আমরা আশ্চর্য হয়েছি যে কীভাবে চালক নিখুঁত দৃশ্যমানতা থাকা সত্ত্বেও হাতির পালকে মিস করেছেন! Tallways অনুপ্রবেশ ডিভাইস ইনস্টল করার জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। তা শিগগিরই এই রুটের সমস্ত হাতির করিডোরে ইনস্টল করা হবে।”
ঘটনার পর ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর প্রবীণ কাসুয়ানের নেতৃত্বে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। দুর্ঘটনাটি ঘটে ৭টা ২৬ মিনিট। আলিপুরদুয়ার এবং শিলিগুড়ির মধ্যে ১৬৮ কিলোমিটার প্রসারিত রেলপথে ট্রেন চলাচল সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এনএফ রেলওয়ে সিআরপিও সব্যসাচী দে প্রশ্ন করেছিলেন যে চালক কীভাবে দিনের আলোতে ট্র্যাক পার হওয়া পশুটিকে দেখতে পাননি। তাঁর মন্তব্য, “আমরা আশ্চর্য হয়েছি যে কীভাবে চালক নিখুঁত দৃশ্যমানতা থাকা সত্ত্বেও হাতির পালকে মিস করলেন?”
এর পর গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে মামলা গৃহীত হয়। পার্টি করা হয় ফিল্ড ডিরেক্টর, বক্সা টাইগার রিজার্ভ, আলিপুরদুয়ার, উত্তর সীমান্ত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, পরিবেশ দপ্তর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং প্রধান বন্যপ্রাণী ওয়ার্ডেন। রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়, যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে নোটিস ইস্যু করে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে। সব পক্ষের আইনজীবী নোটিস গ্রহণ করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা হলফনামা জমা দেবেন বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.