অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা প্রতিনিধিরা। ছবি: প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
নব্যেন্দু হাজরা: ট্রামেই যেন একফালি সুন্দরবন। ঢংঢং করে ঘণ্টা বাজিয়ে এঁকেবেকে সে ছুটবে শহরের রাজপথে। আর ভিতরে হবে সুন্দরবনের লোকগায়কদের নাটক, গান, আড্ডা, নানা অনুষ্ঠান। ট্রামে চেপে সুন্দরবনের মানুষের দিনলিপি সম্পর্কে অবহিত কলকাতার মানুষজন। ট্রামযাত্রার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন রক্ষার বার্তা দিতে শহরে আসছেন বিভিন্ন দেশ থেকে ট্রামপ্রেমীরা। আগামী শুক্রবার ২৮ মার্চ থেকে চারদিন ব্যাপী শহরে হতে চলেছে অনুষ্ঠান। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুন্দরবন ট্রামযাত্রা’। একটি সুসজ্জিত ট্রাম সুন্দরবনের প্রাণশক্তিকে কলকাতায় নিয়ে আসবে।
মেলবোর্নের ট্রাম কন্ডাক্টর রবের্তো আন্দ্রেয়া ও অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিনিধি দল প্রতীকী টিকিটের মাধ্যমে যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাবেন ও আড্ডা দেবেন। প্রেসক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয় ট্রামপ্রেমী সংগঠনের তরফে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এই ট্রামযাত্রা উৎসবের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ও বিখ্যাত চিত্রনির্মাতা মহাদেব শী। তিনি বলেন,”তিরিশ বছর ধরে ট্রামযাত্রা ট্রামকেন্দ্রিক অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক কাজ করে চলেছে। এই উৎসবে সুন্দরবন এবং কলকাতার জলবায়ু সংকট নিয়ে কথা বলার একটা পরিসর তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে এই সংকটকে প্রতিহত করা যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা ভাবছি। আমরা বলছি, শুধু হেরিটেজ হিসাবে ট্রাম থেকে যাওয়া নয়, ট্রামকে আরও বেশি করে যাতে ব্যবহার করা যায়, আমরা সেই আবেদন রাখছি।”
অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা প্রতিনিধিরা প্রত্যেকেই চান, পরিবেশরক্ষায় কলকাতায় ট্রাম চলুক তার নিজের ছন্দে। আগামী ২৮-৩১ এই চার দিন ধরে চলবে কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রা। তার জন্য এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। রাজ্য সরকারের একটি ট্রাম ভাড়া নিয়ে চালানো হবে উৎসবের চার দিন। এই দিনগুলোয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেড-শ্যামবাজার রুটে বিশেষ ওই ট্রামটিতে বিনামূল্যে ভ্রমণ করতে পারবেন শহরের মানুষ। এই উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা অস্ট্রেলিয়ান কন্ডাক্টর রবের্তো ডি আন্দ্রেয়া বলেন,”বিশ্বের সব শহর ‘লাইট রেল’ হিসেবে ট্রাম ফিরিয়ে আনছে। এর লক্ষ্যই হচ্ছে, ভিড় কমানো, দূষণমুক্তি ও কার্বন নিঃসরণ।” রবার্তোর কথায়, “সুন্দরবন ট্রামযাত্রা নানারকম রঙিন ট্রাঙ্ক, জীব বৈচিত্র্য উদযাপন করে বানানো তথ্যমূলক টিকিট এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগকে প্রাধান্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের পরিসর বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ক্রমাগত কাজ চলছে।”
আরেক উদ্যোক্তা মিক ডগলাস বলেন, “ট্রামকে বাঁচাতে সকলকে উদ্যোগ নিতে হবে।” এ বিষয়ে ৩১ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটেয় সুন্দরবন ও কলকাতার জলবায়ু সংকট নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে আইসিসিআর রবীন্দ্রনাথ টেগোর সেন্টার সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে। এদিকে এসপ্ল্যানেড ট্রাম টার্মিনাসে উৎসবের চারদিন সন্ধেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও উঠে আসবে সুন্দরবন প্রসঙ্গ। সেখানে তৈরি করা হবে নৌকোর আদলে মণ্ডপ। সুন্দরবনের পরিবেশের বিভিন্ন ধ্বনি নিয়ে হবে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.