সোমনাথ রায়: তাপমাত্রা হিমাঙ্কের থেকেও দশ ডিগ্রি নিচে। সিন্ধুনদে শুধু জল নয়। ভেসে আসছে জমাট হয়ে থাকা পাথরও। বাস্তবিক হাড়হিম করা আবহাওয়া।
এর মধ্যেই জলে ঝাঁপ দিলেন বছর চুয়ান্নর এক ব্যক্তি। না, আত্মহত্যার চেষ্টা নয়। তবে?
মনে হতে পারে লোকটি নিশ্চয়ই পাগল! ভাবনাটা এক্কেবারে মিথ্যে অবশ্য নয়। ঠিক পাগল না হলেও, লোকটার মাথায় একটু আধটু ‘ব্যামো’ আছেই। সেই ‘ব্যামো’ হল এলাকার প্রান্তিক, অবহেলিত প্রজন্মকে সহজে, খেলার ছলে বিদ্যা দেওয়া। উষ্ণায়নের করাল গ্রাস থেকে তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় লাদাখের পরিবেশ বাঁচানো। তিনি সোনম ওয়াংচুক। যাঁর জীবনযাত্রা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই জন্ম নেয় ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর রণছোড়দাস শ্যামলদাস চাঞ্চড় ওরফে র্যাঞ্চোর চরিত্র।
স্থানীয়দের শিক্ষিত করতে তাঁর প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্টস’ এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ (সেকমোল) ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। সেই ফাঁকেই তিনি লেগে পড়েছিলেন উষ্ণায়নের ফলে লাদাখের ক্ষতি ঠেকানোর কাজে। কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তামাম দুনিয়াকে। এবার সেই সোনম ওয়াংচুক পরিবেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন আরও বড়ভাবে। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর জীবনের অন্যতম আদর্শ ‘সিম্পল লিভিং’কে হাতিয়ার করে ভারতীয়দের জন্য রেখেছেন ‘লিভ সিম্পলি’র আবেদন। তারই অঙ্গ হিসাবে এই কনকনে ঠান্ডায় সিন্ধুতে সাঁতার কাটলেন তিনি।
কেন হঠাৎ সোনমের এই অদ্ভুতুড়ে কাজ? বললেন, “আমি যদি এই কনকনে ঠান্ডায় সাঁতার কাটতে পারি, তাহলে আপনারাও একটু চেষ্টা করলেই গিজারের ব্যবহার বন্ধ করতে পারবেন।” কিন্তু তার সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক কোথায়? সোনমের মতে, “একজন মানুষের গিজারে স্নান করতে গড়ে রোজ এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। গ্রামে একটি পরিবারের এই পরিমাণ বিদ্যুতে অনায়াসে দু’-তিনদিন চলে যায়। লাখ লাখ মানুষ যদি এভাবে গিজার ব্যবহার বন্ধ করেন, তাহলে ভাবুন কত বিদ্যুৎ বাঁচবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ তৈরির কারখানার প্রয়োজনও কমবে। তাদের বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতি করবে না।” শুধু ঠান্ডা জলেই নয়। সোনমের আবেদন শাওয়ারের বদলে বালতিতে জল ভরে স্নান করতে। তাঁর মতে, এতে জলের অপচয় কমবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.