Advertisement
Advertisement
বসন্তবৌড়ি

‘যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে…’, কিশোরদের হাত থেকে বিরল বসন্তবৌড়ি ছানা উদ্ধার মহিলার

পাখির শাবকগুলি আপাতত উলুবেড়িয়ার রেঞ্জের ৫৮ গেট রেসকিউ সেন্টারের আশ্রয়ে।

social worker in Uluberia rescued birdlings from children's
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 19, 2019 6:28 pm
  • Updated:August 19, 2019 6:28 pm  

সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া:  খাঁচার পাখি আর বনের পাখির চিরকালীন দ্বন্দ্বের কথা তো কবেই বলে গিয়েছেন কবি। পক্ষীস্বরূপ আপন স্বাধীন অন্তরের সীমাবদ্ধতাটুকু মরমে উপলব্ধি করেছিলেন বলেই তাঁর এমন রচনা। বাস্তবে অবশ্য খাঁচার পাখি আর বনের পাখির বন্ধুত্বে অনেক খাদ মিশেছে। বন্ধু বলতে তেমন কেউ নেই।

[আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় আলাদা উদ্যোগ নয়, চাঁদ সদাগরের দেখানো পথেই আজও গ্রামে গাছ মেলা]

এমন অসময়েও কেউ কেউ আছেন, যাঁরা সহমর্মিতা দিয়ে এগিয়ে আসেন আকাশের মুক্তমনাদের জন্য। যেমন উলুবেড়িয়ার সমাজকর্মী জয়িতা কুণ্ডু। গ্রামের কিশোরদের বাঁধন থেকে বিরল প্রজাতির তিনটি বসন্তবৌড়ি ছানাকে উদ্ধার করে তুলে দিলেন বনদপ্তরের হাতে। একটু বড় হলেই আকাশে, তাদের স্ববাসস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।    

Advertisement

বাগনান থানার মুর্গাবেড়িয়া গ্রামের রাস্তার ধারে একটি গাছে বাসা বেঁধেছিল বসন্তবৌড়ি পরিবার। তাদের ডিম ফুটে জন্ম নিয়েছিল তিনটি ছোট্ট পক্ষী-শাবক। কয়েকদিনের মধ্যেই ছানাদের সারা গা সবুজ পালকে ঢেকে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও তাদের ছোট্ট ডানার এমন জোর হয়নি যে আকাশপানে উড়ে যায়। রবিবার বিকেলে যখন পাখি মা ছানাদের জন্য খাবারের অন্বেষণে ডানা মেলেছিল অন্যত্র, ঠিক তখনই গ্রামের পাঁচ কিশোর বাসা থেকে তাদের চুরি করে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিল। মায়ের আনা খাবার আর শাবকদের মুখে জোটেনি।

কিশোরের দল পাখিগুলোকে নিয়ে যখন বাড়ির পথে হাঁটছিল, তারই উলটো দিক দিয়ে আসছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী মাধবপুর চেতনা সমিতির সম্পাদক জয়িতা কুণ্ডু। তিনি ওই কিশোরদের হাতে পক্ষী শাবক তিনটিকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। জানতে চান, ওদের কোথায় পেল ছেলেরা। এরা জানায় যে রাস্তার পাশের একটি গাছে বাসার মধ্যে থেকে খুদে পাখিদের গান শুনে ওরা বাচ্চাগুলোকে গাছ থেকে ধরে এনেছে। জয়িতাদেবী তাদের বলেন, এভাবে মায়ের কাছ থেকে বাচ্চাদের কেড়ে এনে তারা ঠিক কাজ করেনি। তিনি এও বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটা এক ধরনের অপরাধ। পুলিশ জানলে তাদের ধরে নিয়ে যাবে। তাই তারা যেন অবিলম্বে বাচ্চাগুলোকে তাঁর হাতে দিয়ে দেয়।

কিন্তু কিশোরের দল নাছোড়বান্দা। সুন্দর, সবুজ পালকে ঢাকা ছানাগুলো তো তখন তাদের কাছে মূল্যবান সম্পত্তির মতো। এ কি হাতছাড়া করা যায়? তাই জয়িতাদেবীর কোনও কথাই শুনতে রাজি হয়নি তারা। উলটে তারা জানায়, কষ্ট করে গাছে উঠে তারাই বাচ্চাগুলোকে পেড়ে এনেছে, তাই বাড়ি গিয়ে এদের পুষবে। জয়িতাদেবী তাদের আরও বোঝান। নাঃ, কাজ হয়নি কিছুতেই। এরপরই মোক্ষম চালটি দেন সমাজকর্মী জয়িতা কুণ্ডু। দুটি পাখির ছানা তিনি কিনতে চান। অর্থপ্রাপ্তির আশায় পক্ষীশাবকের প্রতি আকর্ষণে কিছুটা ভাঁটা পড়ে কিশোরদের। শেষমেশ টাকা দিয়েই পাখির ছানাদের বন্ধনমুক্ত করেন জয়িতাদেবী।

basantabouri2

তাদের নিয়ে বাড়িতে ফেরেন তিনি। রাতে তাদের ছাতু গুলে ড্রপার দিয়ে খাওয়ান। এবং উলুবেড়িয়া বনদপ্তরের রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকারকে ফোন করে সমস্ত বিষয়টি জানান। উৎপলবাবু জানান, সোমবার সকালেই বনকর্মীরা গিয়ে পাখির বাচ্চাগুলিকে জয়িতাদেবীর কাছ থেকে নিয়ে আসবেন। সেইমতো সোমবার সকালে বনকর্মীরা এসে ওই তিনটি পক্ষীশাবককে ৫৮ গেট রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে যান। পক্ষীশাবকগুলিকে বনকর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় জয়িতাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাখির বাচ্চাগুলির কোনওরকম অযত্ন হবে না বলে বনকর্মী বিবেকানন্দ মান্না তাঁকে আশ্বস্ত করেন। এমনকী তিনি ইচ্ছা করলে যখন ইচ্ছা গিয়ে ওই বাচ্চাগুলোকে দেখে আসতে পারবেন। বাচ্চাগুলি বড় হয়ে গেলে জয়িতাদেবীর সামনেই বনে ছাড়া হবে বলেও বনকর্মীরা তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন।

[আরও পড়ুন: প্লাস্টিক ব্যবহারই ভোগাচ্ছে শহরকে, জলমগ্ন কলকাতা দেখে তিতিবিরক্ত পরিবেশবিদরা]

জয়িতাদেবী বলছেন, পাখির বাচ্চাগুলি সারারাত নিজেদের মধ্যে একটা সুরেলা ছন্দে শব্দ করে গিয়েছে। আর এই সুরেলা ছন্দই তাদের বন্দি হওয়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করছেন। এর আগেও তিনি বাসা ভেঙে পড়ে যাওয়া ছাতারে পাখির কয়েকটি বাচ্চাকে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে বড় করে বনে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এবারে জয়িতাদেবীর বন্দিমুক্তির তালিকায় বসন্তবৌড়ির ছানা।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement