সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টাটকা সবুজ পাতাটি একেবারে হৃদকমল সদৃশ (Heart-shaped)। দূর থেকে বড় মনোরম। চোখের আরাম, মনেরও আরাম। কিন্তু না, ওই রূপে মজলেই বিপদ। রূপের টানে কাছে গেলেই তীব্র কটূ গন্ধের সঙ্গে আপনার গায়ে বিষ ঢেলে দেবে এই গাছ। সে বিষ কেমন জানেন? কাঁকড়াবিছে (scorpion-like venom) কামড়ালে ঠিক যতটা বিষ আপনার শরীরে যায়, ঠিক ততটাই ভয়ংকর এই গাছের বিষ। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বৃষ্টিচ্ছায় অরণ্যে এই গাছের সন্ধান পেয়ে কিছুটা বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। এতদিন অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলে প্রাণী বৈচিত্র্যের কথা জানা ছিল সকলের। এমন বিষাক্ত উদ্ভিদের সন্ধান নতুনই।
সাধারণভাবে এই গাছের স্থানীয় নাম – জিম্পি জিম্পি (Gympie-Gympie)। শুধু একটি গাছই নয়, দুর্গন্ধযুক্ত এবং বিষাক্ত এসব গাছেদের একটা গোষ্ঠীর খোঁজ মেলে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন বনাঞ্চলে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডেও এবার তাদের দেখা মিলল। আকারে খুব বড় হয় না। অনেকটা ঝোপ তৈরি করে থাকে। দূর থেকে দেখতে ভাল লাগলেও, সামান্য কাছে গেলে তীব্র গন্ধ। এরপর পাতার গায়ে লেগে থাকা একেবারে সূক্ষ্ণ সূচের মতো রোঁয়া দিতে বিষপ্রয়োগ। জিম্পি জিম্পির কামড়ের শিকার যারা হয়েছেন, নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানাচ্ছেন, প্রথমে পুড়ে যাওয়ার মতো একটা অনুভূতি হয়। ঘণ্টাখানেক পর থেকে শরীরে তীব্র যন্ত্রণা। স্নান করতে গেলে আরেকপ্রস্ত দহনজ্বালা। শেষমেশ প্রায় সপ্তাহখানেকের আগে সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Queensland, Australia)মলিকিউলার বায়োসায়েন্সের অধ্যাপক ইরিনা ভেটার জানাচ্ছেন, পাতার গায়ে সূক্ষ্ম রোঁয়া আসলে এক ধরনের প্রোটিন, যা পাতাকে বাঁচিয়ে রাখে এবং মানুষের বিপদ তৈরি করে। এই উদ্ভিদের মধ্যে থেকে নতুন ধরনের প্রোটিন এবং বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। গাছের নাম অনুসারে তাদের একত্রে বলা হচ্ছে – জিম্পিটাইডস (gympietides)। অধ্যাপক ইরিনার কথায়, ”অবাক হচ্ছি, গাছের মধ্যে থাকা বিষাক্ত পদার্থটির সঙ্গে অনেকাংশেই মিল রয়েছে কাঁকড়াবিছে বা বিষাক্ত শামুকের মধ্যেকার বিষের। অণুর ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণ করে আমরা এটাই খুঁজে পেয়েছি। তাই জিম্পি-জিম্পির বিষের শিকার যাঁরা, তাঁরা কাঁকড়াবিছে কামড়ানোর মতো যন্ত্রণা পান।” আশঙ্কার কথা আরও আছে। এই বিষ মূলত মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সময়মতো চিকিৎসা না হলে, দীর্ঘমেয়াদি স্নায়বিক সমস্যায় পড়তে পারেন কেউ।
অস্ট্রেলিয়ায় এই উদ্ভিদের হদিশ পাওয়ার পর এ নিয়ে বিশদে গবেষণা তো চলবেই। তবে তারই মধ্যে গবেষকমহলের ধারণা, বিষাক্ত জিম্পি-জিম্পির ছোবলমুক্ত হয়ে মানুষকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। গাছের বিষ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি সেই চিকিৎসার রাস্তাও খুঁজছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.