সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পৃথিবীর পড়শি গ্রহের মাটির তলায় এতদিন লুকিয়ে ছিল সে। নাসার এক ‘বিকল’ যন্ত্রের কেরামতিতে আচমকা ধরা পড়ে গেল! আর তাতেই আলোড়ন ঘটে গেল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিজ্ঞানীমহলে। স্বাভাবিকভাবেই এই তথ্য সামনে আসায় নড়েচড়ে বসেছেন গবেষকরা। কারণ, প্রথমত এর মাধ্যমে গ্রহটির ভূপ্রাকৃতিক ইতিহাস বোঝা যেমন আগের তুলনায় সহজ হবে, তেমনই যুগ যুগ ধরে উঠে আসা গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনার দাবিও অনেক বেশি জোরালো হবে।
গ্রহের নাম মঙ্গল। সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ। পৃথিবীরই পড়শি। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, গ্রহের মাটির নিচে রয়েছে বিশালাকৃতি ভৌম জলস্তর (Ground water)! আর সেখানে জলের অস্তিত্ব রয়েছে তরল রূপেই, হিমায়িতভাবে নয়। মঙ্গলের মাটির গভীরে স্থিত জলস্তরের ব্যাপ্তি বিশাল জায়গাজুড়ে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ১১ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে বিস্তৃত রয়েছে এই ভৌম জলস্তর। এই ক্ষেত্রে আবার পৃথিবীর মাটির গঠনের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে পড়শি এই গ্রহটির। পৃথিবীর ক্ষেত্রে ভৌম জলস্তর যেমন গ্রানাইট বা অন্য কোনও শিলা দিয়ে তৈরি কাঠামোর খাঁজে খাঁজে সঞ্চিত থাকে, মঙ্গলের (Mars) ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা একই রকম। এখানে আগ্নেয় শিলাস্তরের খাঁজে খাঁজে ছড়িয়ে রয়েছে জলরাশি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে মঙ্গলে জলের এই ‘আবিষ্কার’ রীতিমতো যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ, এর আগে জানা ছিল, ৩০০ কোটি বছরেরও বেশি সময় আগে মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে জলের যাবতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। জলকণা (Waterdrops) সেখানে নিঃশেষিত। অথচ নাসার ‘ইনসাইট’ ল্যান্ডারের হাত ধরে চাঞ্চল্যকর যে ‘আবিষ্কার’ সম্প্রতি সামনে এল, তাতে গ্রহটির গঠন-পরিবেশ সম্পর্কে নতুন করে তথ্য মিলবে বলেই মনে করছেন সান দিয়েগোর স্ক্রিপস ইনস্টিটিশন অফ ওশনোগ্রাফির সহকারী অধ্যাপক ভসন রাইট-সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা। মাইকেল মাঙ্গা, ম্যাথিয়াস মর্জফেল্ড তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
জানা গিয়েছে, বিজ্ঞানীদের এই দলটি লাল গ্রহ সম্পর্কে এই চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কার করতে গিয়ে শিলার গঠন, পৃথিবীর অ্যাকুইফার (এক ধরনের ভৌম জলস্তর), তৈলক্ষেত্র প্রভৃতি সংক্রান্ত গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেছিলেন। তাতেই মিলেছে সাফল্য। তবে এর পাশাপাশি নাসার (NASA) ‘ইনসাইট’ ল্যান্ডারের ভূমিকাও কম নয়। বর্তমানে এই ল্যান্ডার (Lander)অকেজো। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ভাষায় ‘মৃত’। ২০১৮ সালে নাসার এই ‘ইনসাইট মিশন’ মঙ্গলে পাড়ি দিয়েছিল। তার পর বহু সময় ধরে এটি মঙ্গলের মাটি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য বিজ্ঞানীদের দিয়েছে। সেই মিশন সমাপ্ত বলে ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালে। কিন্তু তার পরেও মঙ্গলপৃষ্ঠে ভৌম জলস্তরের সন্ধান সম্পর্কে যুগান্তকারী তথ্য দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই কামাল করল নাসার ‘ইনসাইট’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.