ছবি: সুশান্ত পাল।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মা পড়াশোনা বিশেষ জানেন না। আর ছেলে, চন্দ্রযান-৩’এর সফল উৎক্ষেপক বিজ্ঞানী বিজয় কুমার দাই! স্বভাবতই তাঁকে নিয়ে গর্বিত বীরভূমের (Birbhum) মল্লারপুরের দক্ষিণগ্রাম। শুক্রবারের সকাল থেকেই অন্ধ্রের সঙ্গে বীরভূমের এই প্রত্যন্ত গ্রাম চেয়েছিল টিভির দিকে। কারণ, চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের পরেও সাফল্যের দোরগোড়ায় গিয়ে তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছিল। এবার কী হয়। কৃষক পরিবারের গৃহবধূ বিজয়ের মা শ্যামলী দাই বলছেন, ‘‘আমি তো অত পড়াশোনা জানি না। তবে সকালে উঠে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি, হরি গাছে জল দিয়েছি। একটাই প্রার্থনা, ছেলেরা যাতে সফল হয়।’’
পড়তে পড়তে ছেলে খেতে ভুলে যেত। দিনরাত শুধু বই নিয়ে পড়ে থাকত। এবার তার ফল পেল। শুক্রবার চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) সফল উৎক্ষেপণের পর ছেলে বিজয়কে নিয়ে এমনই বললেন মা। আর বাবা নারায়ণচন্দ্র দাই বলেন, ‘‘সামান্য এনভিএফের চাকরি করতাম। সামান্য কিছু জমি ছিল। ধান বিক্রি করে ছেলেদের পড়াতাম। ছেলে আরও বড় বিজ্ঞানী হোক। এই প্রার্থনা করি।’’ এদিকে সফল উৎক্ষেপণের পরে দক্ষিণগ্রামের সেই কৃষকের বাড়িতে ভিড় করেছেন আত্মীয়স্বজন থেকে গ্রামবাসীরা। বিশ্বের দরবারে চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদে যান পাঠানোর দলে বিজয় সামিল ছিল, এটাই গ্রামের কাছে গর্বের।
লক্ষ্মীনারায়ণ লীলাবতী স্মৃতি প্রাথমিক স্কুল থেকে পড়াশোনা শুরু। তাঁর শিক্ষক সনৎ কুমার নাগ জানান, ‘‘এমন ছেলে এখন আমারই আদর্শ। গ্রামে এলে বাড়িতে আসে। গতবার বেঙ্গালুরুতে অপারেশনের পর চারদিন এসেছে। যোগাযোগ রাখে নিয়মিত। এ ছেলে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে।’’ গ্রামবাসীরা জানায়, প্রতিবার পুজোয় নিয়ম করে গ্রামে আসে। যখন আসে সে তখন
গ্রামেরই ছেলে হয়ে থাকে। প্রতিবেশী দেবাশিস রায় জানান, ‘‘ও আমাদের কাছে একটা প্রেরণা। মেধা, পরিশ্রম, অধ্যবসায় থাকলে কৃষকের ছেলে চাঁদে যান পাঠাতে পারে! সঙ্গে তাঁর অমায়িক ব্যবহারও গ্রামবাসীদের উপরি পাওনা।’’
তিন ভাইয়ের মধ্যে বিজয় মেজো। বড় ভাই প্রাথমিক শিক্ষক। ছোট ভাই বাংলায় স্নাতকোত্তর। বাবার জমিতে চাষ করে। আর বিজয় জগৎতাড়িনী বিদ্যায়তন থেকে ৮৯ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশের পর বেলুড় থেকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে ২০০৭ সালে বেঙ্গালুরুর ইসরোতে মহাকাশ বিজ্ঞানী হিসাবে কর্মরত। জগৎতারিনী স্কুলের শিক্ষক উৎপল মণ্ডল বলেন,
”বিজয় আমাদের স্কুলের ছাত্র এটাই গর্বের বিষয়। ও এলে তাঁকে নিয়ে আমরা ছেলেদের সামনে প্রেরণা হিসাবে তুলে ধরব। আমরা চাইব, গ্রামের কৃষকের বাড়ি থেকে ভবিষ্যৎ ভারতে হাজারও বিজয় উঠে আসুক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.