সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে উদ্যোগী কচিকাঁচারা। বিশেষত স্কুলের পরিবেশ প্লাস্টিমুক্ত রাখতে উলুবেড়িয়া একদল স্কুলপড়ুয়া নামল পথে।’নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’কে সামনে রেখে সোমবার থেকে শুরু হল তাদের সচেতনতা অভিযান। স্কুলের পরিবেশকে নির্মল রাখার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হল।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান।’ চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। আর সেই বিশেষ সপ্তাহেই বিদ্যালয় ও তার সংলগ্ন বেশ কিছুটা এলাকাকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে আমতা-১ ব্লকের সোনামুই ফতে সিং নাহার উচ্চ বিদ্যালয় ও তার সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকশো পড়ুয়া। স্কুল সংলগ্ন এলাকাকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে তারা আগামী এক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি চালাবে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও একযোগে প্লাস্টিক ও পলিথিনকে বিদ্যালয় চত্বর থেকে নির্মূল করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
পড়ুয়ারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে এবিষয়ে সচেতন করতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাজারে গিয়েও তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল তুলে ধরছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দয়াময় ভট্টাচার্য জানান, পড়ুয়ারা যাতে বিদ্যালয়ে প্লাস্টিক নিয়ে প্রবেশ না করে তার উপরেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। বিদ্যালয় চত্বর থেকে সংগ্রহ করা প্লাস্টিক সামগ্রী বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে পুনর্ব্যবহার করারও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। একইসঙ্গে বিদ্যালয়ের যে কোনও অনুষ্ঠানে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু সংসদের প্রধান আয়ুষ সামন্তের কথায়, ‘প্রকৃতি বাঁচাতে ও সুস্থ, সুর্নিমল, সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলতে একযোগে লড়াই চলবে।’
ইতিমধ্যেই এই অভিযানে শামিল হয়েছে অসংখ্য স্কুল। তার মধ্যে আরও একটি স্কুল হল উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের রাজাপুর থানার করাতবেড়িয়া সবিতা ভক্তা স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানকার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পলিথিন বর্জন করে সমাজকে সুস্থ রাখতে পথে নেমেছে। তারা এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় মানুষজনকে পরিবেশ সুস্থ রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে এই কাজে উপস্থিত ছিলেন উলুবেড়িয়া-২ বিডিও নিশীথ কুমার মাহাতো, স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার চেটেল ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা। এই স্কুলের পড়ুয়ারা এলাকার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে এলাকায় কোথাও জল জমে রয়েছে কিনা? রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙানো হয় কিনা? কেউ পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করেন কিনা? এই রকম নানান প্রশ্ন করল স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেইসঙ্গে বাসিন্দাদের উত্তর লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি চলল তাঁদের সচেতন করার কাজ।
এহেন উদ্যোগে যথেষ্টই খুশি এলাকার মানুষ। বিদ্যালয়ের ছাত্রী চন্দ্রানী রাম জানায়, তারা এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে বলছে, এলাকায় কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। জ্বর হলেই ডাক্তার দেখাতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ কোনওভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। মানুষ তাদের কথা শুনছেন। স্থানীয় মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়িতে থাকা পলিথিনের ব্যাগ বের করে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার চেটেল বলেন, ‘মূলত ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও পলিথিন বর্জনের বার্তা দিতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা এই উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্র ছাত্রীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভে করার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে।’ ছাত্র ছাত্রীদের এই উদ্যোগে এলাকার মানুষ খুব খুশি এবং তাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.