প্রীতিকা দত্ত: প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিবেশবিদদের মাথাব্যথা। আর সেটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার। একজন মহিলা নাকি প্লাস্টিক স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে বছরে ১২৫ কেজি বর্জ্য ফেলেন। এবার এ দেশের প্রায় ৩৫ কোটির বেশি ঋতুমতী মহিলার কথা ভাবলেই দূষণের মাত্রাটা আন্দাজ করতে পারবেন। গবেষণা বলছে, একটা প্লাস্টিক স্যানিটারি প্যাড ৫০০ থেকে ৮০০ বছর একইভাবে পরিবেশে পড়ে থাকে। তাই দরকার বায়োডিগ্রেডেবল প্যাড। যা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পরিবেশে মিশে যাবে।
ঋতুস্রাবের দিনগুলোয় কাপড়েই ভরসা রাখতেন দিদিমা-ঠাকুমারা। আজও প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জে ভরসা সেই নোংরা কাপড়ই। তবে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলাচ্ছে। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের রিপোর্ট বলছে, দশজনের মধ্যে ছ’জন মহিলা ঋতুস্রাবের দিনগুলোর নিজে থেকেই নোংরা কাপড় বাদ দিয়েছেন। শহরাঞ্চলের ৭৮ শতাংশ মহিলা সচেতন হয়েছেন। আর গ্রামের ৪৮ শতাংশও বলছেন, ‘কাপড় নয়। স্যানিটারি প্যাড চাই।’ মহিলাদের মধ্যে এই সচেতনতা দেখে খুশি সমাজকর্মীরা। যদিও তাঁদের কথায়, দরকার ১০০ শতাংশ সচেতনতা। পাশাপাশি প্লাস্টিক প্যাড নয়, বায়োডিগ্রেডেবল প্যাড, ক্লথ প্যাডের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। ব্রিটিশ লেখক জেন চিলিংওয়র্থ তাঁর ‘ক্লিন গ্রিন’ বইটিতেও ট্যাম্পন ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ, পরিবেশ দূষণ রোখার পাশাপাশি এতে ব্যক্তিগত সুরক্ষার দিকটাও বজায় থাকবে বলে লিখছেন তিনি।
সহজে প্রকৃতিতে মিশে যাওয়া বায়োডিগ্রেডেবল প্যাডের দাম বেশি বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন। সেক্ষেত্রে কেউ চাইলে মেনস্ট্রুয়াল কাপ বা ট্যাম্পন কিনতে পারেন। কলকাতার সমাজকর্মী ময়ূরী বলছিলেন, “প্রকৃতির কথা ভেবেই বছর তিনেক আগে থেকে মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে শুরু করি। এদেশের ক্ষেত্রে সেটা কতজন ব্যবহার করতে পারবেন, তাতে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, সাধারণ প্যাডের মতো এগুলো এখনও পাড়ার মোড়ের ওষুধের দোকানে পাওয়া যায় না। অনলাইনে কিনতে হয়। আর যে ক্লথ প্যাড রয়েছে, সেটা গ্রামের মেয়েদের জন্য ব্যবহার করা কঠিন। কারণ, ব্যবহারের পর তা ঠিকমতো ধোয়া। এবং ভাল করে শুকানোর জায়গা কোথায়!” সহমত আর এক সমাজকর্মী শ্রীলেখা চক্রবর্তীও। শ্রীলেখা গত সাত বছর ধরে ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে সেখানকার মেয়েদের ঋতুচক্রের স্বাস্থ্যবিধির পরামর্শদাতা হিসেবে কর্মরত। তিনি বলছিলেন, “স্বচ্ছ ভারত অভিযানে মেয়েদের স্কুলে স্কুলে বাথরুম তো তৈরি হয়েছে। কিন্তু জল কোথায়? যেসব মহিলা ভোর তিনটে থেকে উঠে প্রচণ্ড গরমে খেতে কাজ করছেন, তাঁর জন্য ক্লথ প্যাড বা মেনস্ট্রুয়াল কাপের ব্যবস্থা করাটা খুব কঠিন। গ্রামীণ এলাকায় চাইলেও কখনও কখনও প্লাস্টিক প্যাডের বাইরে ভাবা যায় না। সেটা সম্ভব হবে যদি সরকার এগিয়ে আসে। ক্লথ প্যাড ওঁদের হাতে তুলে তুলে তার ব্যবহার শেখানোর দায়িত্বটাও নিতে হবে। সরকারি স্তরে কাজ এগলেই গ্রামের মেয়েরা নিজে থেকে পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হতে পারে বলে আমার ধারণা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.