সুকুমার সরকার, ঢাকা: সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক তৈরি করা নিয়ে বিতর্কে বাংলাদেশের (Bangladesh) খোদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী। পরিবেশবিদদের আপত্তি, সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশি প্রাণীদের এনে সাফারি পার্ক তৈরির কাজে হাত লাগানো হয়েছে। তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। পরিবেশমন্ত্রী মহম্মদ শাহাবউদ্দিনের নির্বাচনী এলাকা মৌলভীবাজারের জুড়ীতে তৈরি হতে চলা এই সাফারি পার্ক (Safari Park)নিয়েই এই মুহূর্তে শোরগোল বাংলাদেশের পরিবেশ মহলে।
জুড়ীর লাঠিটিলা বনাঞ্চলটি সংরক্ষিত (Reserve Forest)। এই বনের মোট আয়তন ৫৬১৫ একর। তার মধ্যে ১৭৫ একরজুড়ে সাফারি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখানকার জীববৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী। পরিবেশবিদদের একাংশ তাই এখানে সাফারি পার্ক তৈরির বিপক্ষে। তাঁদের আশঙ্কা, সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) যতটুকু টিকে আছে, তা ধ্বংস হয়ে দিকে যাবে। বন উজাড় হওয়া ও চোরাশিকারিদের সক্রিয়তায় সেখানকার প্রাণীরা এমনিতেই বিপদে আছে। তাদের সংরক্ষণের জন্য আলাদা উদ্যোগ বা প্রকল্প না নিয়ে সেখানে সাফারি পার্ক তৈরি হলে প্রাণীরা আরও বিপদে পড়তে পারে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাফারি পার্কের জন্য বিদেশ থেকে সিংহ, বাঘ, জিরাফ, জেব্রা-সহ ১৩৭ ধরনের বন্যপ্রাণী কেনা হবে। বন্যপ্রাণীর বড় অংশ আমদানি হবে আফ্রিকা (Africa)থেকে। বিদেশি প্রাণীদের দেখভালের জন্য প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণও নিতে হবে রক্ষীদের। সেই বাবদ ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিপুল অর্থ বরাদ্দ করে তৈরি হচ্ছে সাফারি পার্ক, যা নিয়ে আপত্তি পরিবেশবিদদের। তাঁদের অধিকাংশের মত, এসব না করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অর্থ খরচ করা উচিত। এমনিতে বাংলাদেশের গাজীপুর এবং কক্সবাজারের ডুলাহাজরায় দুটি সাফারি পার্ক আছে, দুটিই বঙ্গবন্ধুর নামে। সেখানে প্রচুর বিদেশি প্রাণীও রয়েছে। তারপর এত ব্যয় করে আরেকটি সাফারি পার্ক তৈরির কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না পরিবেশবিদরা।
যদিও লাঠিটিলার এই প্রকল্পের ডিরেক্টরের মতে, বনের একাংশ অবৈধভাবে দখল করে গ্রাম বানানো হয়েছে। সেই গ্রামেই সাফারি পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এতে ক্ষতি হবে না। বরং বেশ পর্যটনের সুযোগ বাড়বে এলাকায় আর কর্মসংস্থানও হবে। যাঁর ইচ্ছেয়, যাঁর নির্বাচনী এলাকায় এত বিতর্ক, সেই পরিবেশমন্ত্রী মহম্মদ শাহবুদ্দিনের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.