স্টাফ রিপোর্টার: এ জঙ্গল-ও জঙ্গলে ঘোরাঘুরি পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারদের (Royal Bengal Tiger) পরিবারে সদস্য সংখ্যা ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। বাঘশুমারের কাজ শেষের দিকে। এতদিন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘের সংখ্যা ছিল ৯৬। তথ্য-পরিসংখ্যান যা সামনে এসেছে, তা থেকে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, আরও ৩৮টি বাঘ বেড়েছে সুন্দরবনে। সংখ্যাটা আপাতত দাঁড়িয়েছে ১৩৪-এ। এবং এর বেশিরভাগটাই সুন্দরবনের ওয়েস্ট ডিভিশনে। যার জেরে সুন্দরবনের এই ডিভিশনকে আরও দু’টি রেঞ্জে ভাগ করার প্রস্তাব নবান্নে (Nabanna) পাঠাল বনদপ্তর। শুধু নতুন দু’টি রেঞ্জ নয়, সেই দু’টি রেঞ্জকে মোট ছ’টি বিটে ভাগ করার প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এই প্রস্তাব পাস হলে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকা বাড়বে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফরেস্ট ডিভিশনের বেশ কিছুটা অংশ যুক্ত হবে এই এলাকায়।
গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে মানুষের সঙ্গে বাঘের সংঘাতের ঘটনা বেড়েছে। খাবারের সন্ধানে জনবসতি এলাকায় ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। কখনও প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে বাড়ির দাওয়ায় আশ্রয় নিতেও দেখা গিয়েছে। বহু কসরত করে তাদের জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন বনদপ্তরের কর্মীরা। এই ঘটনার বেশিরভাগটাই ঘটেছে সুন্দরবনের (Sunderbans) ওয়েস্ট ডিভিশনে। এর মধ্যেই বাঘশুমারের কাজ শুরু হয়। তাতেই বড়সড় তথ্য সামনে এসেছে। এই ঘটনারই ফল হিসাবে জঙ্গলের রেঞ্জ বাড়িয়ে তাকে আরও ছ’টি ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বনদপ্তর থেকে জানা গিয়েছে, মাতলা রেঞ্জের অধীনে ছিল ঝড়খালি বিট। এই ঝড়খালিকেই আলাদা রেঞ্জ করে তাকে হেরোভাঙা, কুলতলি, নলগোড়া – এই ৩টি বিট আর বনি ক্যাম্পে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কলস বিট ছিল রায়দিঘি রেঞ্জের অধীনে। তাকে আলাদা রেঞ্জের তকমা দিতে চেয়ে কলস আর চুলকাঠি – এই দু’টি ক্যাম্পে ভাগ করার প্রস্তাব দিয়েছে দপ্তর। শুক্রবার বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriyo Mullick) বলেন, “বাঘের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সেই কারণেই এভাবে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকাকে বাড়িয়ে আরও রেঞ্জ ও বিট এলাকায় ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” এছাড়া সজনেখালি-সহ পাঁচটি রেঞ্জেও বাঘ বেড়েছে বলে খবর। মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘাত কমাতে বনের সীমানায় স্টিল ফেন্সিং দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
এছাড়া একগুচ্ছ উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী। তার মধ্যে জঙ্গল উন্নয়ন নিগমের কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরির কথা জানানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে রাজ্যের রেড পান্ডা (Red Panda) নেওয়ার আবেদন পাওয়ার খবর দিয়েছেন মন্ত্রী। কলকাতা প্রেস ক্লাবে বনমহোৎসবকে কেন্দ্র করে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মন্ত্রী আবার জানিয়েছেন, ইডেন গার্ডেনে পর্যটকদের বহুদিন বাদে ফের পুলিশ ব্যান্ড চালুর ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, ময়দানের শাল-পিয়াল-মহুল বনের দায়িত্ব প্রেস ক্লাবের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে ঘোষণা করেন বনমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক।
অন্যদিকে, উত্তর চব্বিশ পরগনার (North 24 Parganas) জেলা সদর বারাসতের আশেপাশে খাস জমির ব্যবস্থা করে হরিণালয় তৈরির ভাবনার কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী। শুক্রবার বারাসতের পাইওনিয়ার পার্কে বন মহোৎসব অনুষ্ঠানে এসে একথা জানান তিনি। বলেছেন, “২০১১ সালের আগে রাজ্যে বনাঞ্চল ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ। ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ২৪ শতাংশ। ২০২৬ সালে আমাদের লক্ষ্য এটাকে ৩২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।” তাঁর কথায়, “বাগদায় একটি হরিণালয় রয়েছে। আমরা পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্রতিটি জেলার হেডকোয়ার্টারে হরিণালয় তৈরি করতে চাই। জেলা সদর বারাসতের আশেপাশেও যদি কোনও খাস জমির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহলে সেখানেও একটি হরিণালয় তৈরি করা হবে।” নিউটাউনের (New Town) হরিণালয়কে শহরের দ্বিতীয় চিড়িয়াখানায় পরিণত করার কাজ প্রায় ষাট শতাংশ হয়ে গিয়েছে বলেও এদিন জানিয়েছেন বনমন্ত্রী। এছাড়া এদিন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বারাসত সত্যবাদী বিদ্যাপীঠেও বনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পালিত হয়েছে বন মহোৎসব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.