সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনিয়মিত বৃষ্টিপাত তথা জলবায়ুর পরিবর্তনই যবনিকা টেনেছিল সিন্ধু সভ্যতার অস্তিত্ত্বে। অঙ্ক কষে এই তত্ত্ব দিলেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত বৈজ্ঞানিক। নাম নিশান্ত মালিক। তিনি আমেরিকার রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (Rochester Institute of Technology) কর্মরত। ‘ক্যাওস: অ্যান ইন্টারডিসিপ্লিনারি জার্নাল অফ ননলিনিয়ার সায়েন্স’ (Chaos: An Interdisciplinary Journal of Nonlinear Science) নামক জার্নালে নিশান্তের এই সমীক্ষার বিষয়বস্তু সবিস্তার প্রকাশিত হয়েছে।
সিন্ধু সভ্যতা (Indus Valley Civilizations)। বিশ্বের সর্বকালের সেরা এবং প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৮,০০০ বছর পুরনো এই সভ্যতার বিস্তার ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে। কিন্তু ধারেভারে, বিশ্বজোড়া অন্যান্য সভ্যতাগুলির থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকা, এই সভ্যতার পতন নিয়ে ধন্দের শেষ নেই। কেন ধ্বংস হয়েছিল সিন্ধু সভ্যতা? উত্তর পেতে এতদিন ধরে চলেছে অনেক গবেষণা, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সামনে এসেছে বেশ কিছু পরস্পরবিরোধী তথ্য। স্বাভাবিকভাবেই যার জেরে তৈরি হয়েছে মতপার্থক্যও। কখনও কোনও বিজ্ঞানী বলেছেন, প্রবল ভূমিকম্পে কালের গর্ভে মুখ লুকিয়েছে এই সভ্যতা। আবার ইতিহাস ঘেঁটে কোনও পক্ষ দাবি করেছে, ইন্দো-আর্যদের আগমনই এই উৎকৃষ্ট মানবসভ্যতার পঞ্চত্বপ্রাপ্তির প্রধান কারণ।
তবে এত তত্ত্বের ঠোকাঠুকিতে নির্দিষ্টভাবে কোনও সূত্র মেলেনি। কিন্তু সম্প্রতি মালিক যে দাবি করেছেন, তার পিছনে রয়েছে নিখাদ গণিত। উত্তর ভারতের নানা অংশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা সংগ্রহ করে, নবতম গাণিতিক পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ করেই মালিক দেখিয়েছেন যে, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণেই সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
অনিয়মিত বৃষ্টিপাত। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন। ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’। আধুনিক বিশ্বের অন্যতম নিদারুণ প্রাকৃতিক সংকট, যার সূত্র আদি যুগেও ছিল। আর সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণ হিসাবে নিজের সমীক্ষায় একেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী নিশান্ত মালিক। তাঁর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার গুহাগুলিতে জমে থাকা স্ট্যালাগমাইট খনিজ পরীক্ষা করে ৫,৭০০ বছর আগের বৃষ্টিপাতের পরিমাপ ও ধাঁচ বোঝা সম্ভব হয়েছে। আর সেই তথ্যেই এটা স্পষ্ট যে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণ যেমন পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, নদীর বহমানতা তেমনই ধ্বংসের কারণও এই বৃষ্টিপাত।
মালিক জানিয়েছেন, “প্যালিওক্লাইমেটোলজিতে অতীতের অল্প সময়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করতে হয়। তা করতে গিয়ে তথ্যগত অনেক সমস্যাও আসে। কিন্তু নতুন এই গাণিতিক প্রক্রিয়ায় সেই সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেই আশাবাদী আমরা।” তাঁর মতে, “অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়াগত বদল ও জলবায়ুর হেরফের ঘটে থাকতেই পারে। সিন্ধু সভ্যতার পতনের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.