ছবি: অমিত সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাস তাদের দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায়। সেই কিং কোয়েলের এবার দেখা মিলল ছোটনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়ায়। তবে এই কিং কোয়েল সংখ্যায় একটা নয়, একেবারে ঘর-সংসার নিয়ে হাজির! ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাদের ছবি। তাতে দেখা যাওয়া তিনটি পাখি পুরুষ, স্ত্রী এবং সম্ভবত শাবক বলে মনে করে হচ্ছে। শহর পুরুলিয়া থেকে খানিকটা দূরে তারা বসতি গড়েছে। সোমবার, ১৯ আগস্টের ঠিক আগে ‘বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবসে’র প্রাক্কালে ‘সংবাদ প্রতিদিন‘-এর ক্যামেরায় লেন্স বন্দি হলো। তা তালিকাভুক্ত হতে চলেছে ই-বার্ড-এ।
একেবারে ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) ছুঁয়ে থাকা ছোটনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়ায় এই পাখির দেখা মেলায় আপ্লুত এই অঞ্চলের পক্ষীপ্রেমীরা। এই বিরল প্রজাতির পক্ষী পুরুলিয়ায় (Purulia) প্রথম দেখা মিললেও এ বঙ্গে সাম্প্রতিককালে আরও দুবার দেখা গিয়েছে কিং কোয়েলকে – দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও মেদিনীপুর সদরে। বন্যপ্রাণ ও পক্ষী নিয়ে কাজ করা গ্রিন প্লাটুর অন্যতম কর্মকর্তা তথা পক্ষী বিশারদ অনির্বাণ পাত্র বলেন, “এই কিং কোয়েল দক্ষিণ এশিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেলেও বাংলায় একেবারেই কম দেখা যায়। খুবই লাজুক পাখি। মানুষ দেখলেই লুকিয়ে পড়ে। তার খুব কাছে পৌঁছে গেলে হঠাৎ উড়ান দেয়। পুরুলিয়াতে এর ছবি আগে পাওয়া যায়নি। কিং কোয়েলের উপস্থিতি এক সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের নিদর্শন। অতীতে এদের প্রচুর শিকার হতো ফাঁদ পেতে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে পুরুলিয়ার এই রঙিন পাখিটির যাতে সেই করুন পরিণতি না হয়।”
কিং কোয়েল বা ‘ব্লু ব্রেস্টেড কোয়েল’ বা ‘নীল বুকের কোয়েল’। এই কোয়েল শিস দেয়। নাক ডাকা ডাকও দিয়ে থাকে। এই পাখিরা বাসা বাঁধে না, এমনকি মাটিতেও ডিম পাড়ে! বিভিন্ন ধরনের বীজ, ঘাস খায়। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও (DFO) অঞ্জন গুহ বলেন, ” বারুইপুর ও মেদিনীপুরে এই পাখির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। ঝাড়খণ্ডেও এই পাখির বিচরণ আছে। সেখান থেকেই সম্ভবত তাদের আসা-যাওয়া চলছে। তাছাড়া পুরুলিয়ার জঙ্গল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত ঠিকানা। জঙ্গলে যাতে আগুন না লাগে সেই বিষয়টি এবার আমাদের দেখতে হবে। যিনি এই পক্ষীকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন, তাঁর কাজকে তারিফ জানাই।”
গত রবিবার এই পাখিটি ধরা দেয় ‘সংবাদ প্রতিদিন‘-এর ক্যামেরায়। বিষহরির আরাধনায় ছোটনাগপুর মালভূমির এই জেলা ছিল একেবারে শুনশান। অঘোষিত বনধ। তাই এমন ছুটির দিনে ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত পাঁচজন পক্ষীপ্রেমী (Birdlover)ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে বেরিয়েছিলেন। যেহেতু বর্ষার মরশুমে বিভিন্ন প্রকারের কোয়েল প্রজননের কারণে গতিবিধি বাড়ায়। তাই তারা ফিল্ডে নামার আগেই তাদের টার্গেট ছিল কোয়েল। এখনও পর্যন্ত বনমহল পুরুলিয়ায় যে সমস্ত কোয়েলের রেকর্ড রয়েছে তা হলো – ধূসর কোয়েল, বটম কোয়েল, জঙ্গল বুশ কোয়েল।
কোয়েলের ছবি তুলতে যাওয়া পক্ষীপ্রেমিক সুপ্রকাশ মণ্ডল, পার্থসারথী মহান্তি, অভিষেক মাহাতো বলেন, “রবিবার আমরা গাড়ি থেকে নামার পরেই মাথার উপরে গনগনে রোদের আঁচ ছিল। চারদিক নিস্তব্ধ। কোনও পাখির ডাক নেই। তাই আমরা ক্যামেরা সেটিং করে প্রথমে নীলকন্ঠ ঘুঘুর ছবি তুলেই ঘন্টাখানেক সময় পার করে দিয়েছিলাম। এর পর পক্ষী কূলের কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় খানিকটা হতাশা কাজ করে। এলোমেলো ভাবে মাঠ, তৎসংলগ্ন কাশফুলের ঝোপে ঘোরাফেরা করতে থাকি। এরই মধ্যে একজনের পায়ের কাছে উড়তে শুরু করে একেকটি করে তিনটি কোয়েল। তার পরেই তারা একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সেই সময়ই সংবাদ প্রতিদিনের আলোকচিত্রী ক্যামেরাবন্দি করে ওই পাখিগুলির।”
তখন সবাই বুঝেছিল বটম কোয়েল বা জঙ্গল বুশ কোয়েল হবে। কিন্তু ক্যামেরাবন্দি করার পর সেই ছবিগুলি প্রিভিউ করে দেখা শুরু হয়। তখনই সবাই অবাক হয়ে যান । কোয়েলটির পা লালচে হলুদ। গলা তামাটে ও নীল শরীর তার। এরপরেই গুগলের (Google) সাহায্যে জানা যায় এই পাখিটি হলো কিং কোয়েল। যা দেখতে খুব রঙিন। এই পাখি ক্যামেরাবন্দি হওয়ায় খুশি বাংলার পক্ষীপ্রেমীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.