সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘বসন্ত এসে গেছে’। লাল পলাশে আগুন ঝরছে পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে। মালভূমির এই দেশ যেন লাল পলাশেই সেজে উঠেছে। অযোধ্যা পাহাড় থেকে বান্দোয়ান, নিতুড়িয়া থেকে কাশীপুর- পলাশের সৌন্দর্যে যেন চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। আর এই সৌন্দর্যকে বনাঞ্চলে ধরে রাখতেই পুরুলিয়া বিভাগে মাইক নিয়ে প্রচারে নামল বনদপ্তর। দোল-হোলির আগেই বৃহস্পতিবার থেকে পলাশ বাঁচাতে মাইক নিয়ে প্রচার শুরু করল এই বিভাগের বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল। মাইকে তারা জানাচ্ছে, পলাশ নিয়ে ছবি তুলুন, সেলফিতে মেতে উঠুন। কিন্তু গাছে থাকা পলাশে হাত দেবেন না। ভাঙবেন না পলাশ ডাল। খোপায় বাঁধতে হলে গাছের নিচে পড়ে থাকা পলাশই ব্যবহার করুন।
আসলে এই ফাগুনে পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা এই বনাঞ্চলে সৌন্দর্য বাড়ায় পলাশ। এই জেলায় প্রায় তেইশ লক্ষ পলাশ গাছে পুরুলিয়ার রূপই বদলে দেয় এই বসন্তে। তাই এবারই প্রথম দোল-হোলিতে এই বনাঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রতি এই নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে বনবিভাগ। আসলে পলাশ রক্ষার্থে এই কাজ প্রথম শুরু করে বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল। তারপরই এই বিভাগের সমস্ত বনাঞ্চলে এই নির্দেশিকা পাঠাচ্ছে পুরুলিয়া বিভাগ। যাতে কোনভাবেই পলাশকে ধ্বংস না করা হয়। ঋতুর নিয়মে যতদিন এই ফুল গাছে থাকবে তা যেন যথেচ্ছ ব্যবহারে নষ্ট না হয়। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, “বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল পলাশ বাঁচাতে যে কাজ শুরু করেছে তা দারুন। আমার বিভাগের সমস্ত বনাঞ্চলের রেঞ্জারদেরই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বনমহলের এই জেলায় সবচেয়ে বেশি পলাশ গাছ রয়েছে পুরুলিয়া বিভাগে। তবে পলাশ আছে কংসাবতী উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগেও। বনদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পুরুলিয়া বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলাশ গাছ আছে এই বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলেই। দোল-হোলির সময় এই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজ কুমার মল্ল বলেন, “কয়েক বছর ধরে বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলে এই পলাশের মরশুমে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে। দোল বা হোলির ছুটি কাটানোর জন্য নয়, মূলত পলাশের টানেই পর্যটকরা ভিড় করছেন। ফলে পলাশ নিয়ে টানা হ্যাঁচড়ায় এই ফুল নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের আবেদন পলাশের সৌন্দর্য চোখ ভরে দেখুন। ফুল ছিঁড়ে, ডাল ভেঙে নষ্ট করবেন না।” আসলে এই পলাশ এই জেলার পর্যটনের মুখও। আর এই পর্যটনকে ঘিরে এখন এই জেলার গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা। তাই এই গাছ ও ফুল বাঁচাতে রীতিমত মাঠে নেমেছে বনদফতর। পলাশ বাঁচলে পর্যটন বাঁচবে। বাঁচবে চাঙ্গা হয়ে ওঠা গ্রামীণ অর্থনীতিও! তাই বনদপ্তরের এই সচেতনতার প্রচারের ক্যাচ লাইন, “পিঁদাড়ে পলাশের বন/ পালাব পালাব মন…”।
ছবি- অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.