সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কাঠকয়লার উনুনের ধোঁয়ার বিষে দূষণ বাড়ছে বাতাসে৷ শিশুদের উপর যার প্রভাব পড়ছে সবচেয়ে বেশি৷ তাই তাদের স্বাস্থ্যবিধির কথা ভেবে আপাতত পুরুলিয়ার ২৭৩২ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বসছে ধোঁয়াহীন চুল্লি। ইমপ্রোভাইজড এই স্মোকলেস চুল্লি তৈরি করবে জেলার স্বনির্ভর দল। আর এই কাজে তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
হাতেনাতে এই ধূমহীন চুল্লি তৈরির দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের লোকশিক্ষা পরিষদ। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতেই মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে এই পদক্ষেপ নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ছবি ধরা পড়েছিল প্রশাসনিক আধিকারিকদের চোখে। তারপরেই নড়েচড়ে বসে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
একাধিক সমীক্ষায় প্রশাসনের নজরে এসেছে, কাঠের উনুন বা জ্বালানির কালো ধোঁয়া শিশুর বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিশুর স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই এই কাজে হাত দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কথায়, ‘ইতিমধ্যেই বাঘমুন্ডি ব্লকের পনেরোটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এই ধূমহীন চুলা আমরা বসিয়ে দিয়েছি। আপাতত আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি সেই কাজও খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে।’ এই জেলায় ৪৮৩৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থাকলেও ২৭৩২টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। তাই আপাতত সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতেই এই চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। স্বনির্ভর দল ছাড়াও ব্লকে–ব্লকে শৌচালয় তৈরির কাজে যুক্ত স্যানিটারি মার্টকেও এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ২৯ জুলাই থেকে ব্লকে–ব্লকে প্রশিক্ষণ চলছে। আজই তা শেষ৷
প্রতিটি ব্লকেই কাজের দক্ষতা বিচার করে একটি স্বনির্ভর দলকে এই কাজের জন্য বাছা হয়েছে। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন চায়, তাদের কাজ স্বনির্ভর দলকেই দিয়েই করাতে৷ তাতে তাদের আয় বৃদ্ধি পাবে, আর্থ–সামাজিক অবস্থার বদল ঘটবে। কারণ, মাস দেড়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে স্বনির্ভর দলগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপরেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এই কাজেও স্বনির্ভর দলকে যুক্ত করল।
এই জেলায় সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দীপ্তার্ক বসুর কথায়, ‘জ্বালানির ধোঁয়ার দূষণের বিষ শিশুর শরীরে প্রবেশ করলে তাঁদের শ্রীবৃদ্ধিতে বাধা হয়ে যায়। সেইজন্যই আমরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে এই পদক্ষেপ নিলাম। জেলার সব কেন্দ্রেই এই চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ধাপে–ধাপে এই কাজ হবে।’ ইট, গোবর, মাটির প্রলেপে পাইপ দিয়ে ধোঁয়াহীন চুল্লি তৈরির এই পরিকল্পনা যে পরিবেশবান্ধবও, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.