Advertisement
Advertisement

Breaking News

Purulia

পুরুলিয়ায় শ্বেত পলাশের সন্ধান, বিরল গাছ সংরক্ষণে বংশবিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু

বনদপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন,মাটিতে পড়ে যাওয়া সাদা পলাশ ফুলের জিন পুল সংরক্ষণ করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা গাছ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে এই গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।

Production on white palash begins in Purulia in order to conservation of rare species
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 1, 2024 12:17 pm
  • Updated:April 2, 2024 5:45 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একটা-দুটো নয়। বনমহল পুরুলিয়া জুড়ে আটটি জায়গায় অন্তত ১৫ টি বিরল শ্বেত পলাশ বৃক্ষের সন্ধান পেল বনদপ্তর (Forest Department)। আর তা পেতেই বনাঞ্চল অনুযায়ী ১৫ গাছকে তালিকাভুক্ত করে সংরক্ষণ করতে সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সারল পুরুলিয়া (Purulia) বনবিভাগ। তার পরিপ্রেক্ষিতে গাছের চারপাশে কাঁটাতারের ফেন্সিং দিয়ে বনদপ্তর ও প্রশাসনের তরফে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাটিতে পড়ে যাওয়া শ্বেত পলাশ ফুল থেকে জিনপুল সংরক্ষণ করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা তৈরি করে এই সাদা পলাশ (Palash) বৃক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা বনদপ্তরের। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সাধু উদ্যোগ। সেইসঙ্গে উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আরও এক বড়সড় পদক্ষেপ।

পুরুলিয়ার বিরল শ্বেত পলাশ ফুল। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়া বনবিভাগ ও কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “প্রাকৃতিক কারণে এই শ্বেত পলাশ গাছ থেকে যে ফুল ঝরে পড়ছে তা কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে সেই ফুলের জিন পুল সংরক্ষণ করে টিস্যু কালচারের (Tissue Culture) মাধ্যমে চারা গাছ তৈরি করে এই গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। যাকে ‘ভেজিটেটিভ প্রপাগেশন’ বলা হয়। এই গাছগুলিকে যাতে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তার জন্য সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।” বনদপ্তর কৃত্রিমভাবে এই শ্বেত পলাশের বংশবিস্তারের পরিকল্পনা নিয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: কে বেশি বিষাক্ত? ‘গোখরো’ মিঠুন নাকি ‘চন্দ্রবোড়া’ অভিজিৎ! ভোটপ্রচারে চর্চায় কার্টুন]

আসলে পুরুলিয়ার পলাশের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বাংলার পর্যটন। লাল পলাশের ছবি সোশাল মিডিয়ার দৌলতে সমগ্র দেশজুড়েই বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুরছে। আর এবার লাল পলাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাসন্তী-হলুদ সেই সঙ্গে বিরল শ্বেত পলাশও। তবে গত বছর থেকেই এই শ্বেত পলাশ নিয়ে হইচই শুরু হয়। গাছের দাম, লিজ দেওয়া নিয়ে ৮০ লক্ষ টাকা দর ওঠে। এর পরই শ্বেত পলাশের গাছে ক্ষত দেখা যায়। এই বিষয়টি নজরে আসতেই সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় ওই গাছগুলির রোগ নিরাময়ে পদক্ষেপ নেয়। হুড়ার রাকাব জঙ্গল ও পুঞ্চার কেন্দার কোনা পাড়ায় ওই গাছের ছাল কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার (SP) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শ্বেত পলাশের বিষয়ে বনদপ্তর আমাদের জানিয়েছে। পুরুলিয়ার পলাশ বাংলার পর্যটনে যুক্ত। বনদপ্তর আমাদের কাছে যেভাবে সাহায্য চাইবে, আমরা তার সব রকম ব্যবস্থা করবো।” পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, হুড়া, পুঞ্চা, বান্দোয়ান, বলরামপুর, বাঘমুন্ডি, রঘুনাথপুর এলাকায় একটি ও অযোধ্যা পাহাড়ের ২ টি এলাকা মিলিয়ে ১৫ টি শ্বেত পলাশের সন্ধান মিলেছে।

মাটিতে পড়ে থাকা পলাশফুল থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বংশবিস্তারের পরিকল্পনা বনদপ্তরের। নিজস্ব চিত্র।

এই জেলায় গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রথম শ্বেত পলাশ গাছের সন্ধান পান পুরুলিয়া শহরের জেলা স্কুল মোড় এলাকার বাসিন্দা আড়শা ব্লকের ভ্রমরটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উজ্জ্বলকুমার দত্ত। তিনি প্রথম এই সাদা পলাশের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ভাইরাল হয়ে পড়েন। তার পর থেকেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় পর্যটকদের। উজ্জ্বলবাবুর কথায়, “বিরল শ্বেত পলাশের ছবি পোস্ট করার পরেই আমার ফোন নম্বর জোগাড় করে প্রচুর মানুষ আমাকে ফোন করেন গাছটি দেখানোর জন্য। একটা শর্তেই ওই গাছ দেখানো হয়। যাতে এলাকার নাম প্রকাশ্যে না আনা হয়।”

[আরও পড়ুন: শিয়রে লোকসভা নির্বাচন, ফের গ্যাসের দাম কমাল কেন্দ্র

সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা (Botany) বিভাগের প্রধান ড. সুব্রত রাহা বলেন, “এই গাছ দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্য। সেজন্যই মানুষের এমন কৌতূহল। শোনা গিয়েছে, গ্রামীণ কবিরাজ মহল সন্তর্পণে এই গাছের ছাল থেকে আঠা বার করে বন্ধ্যাত্ব নিরাময় করার চেষ্টা করছেন। তবে এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কোনও প্রমান মেলেনি। এই গাছ নিয়ে গবেষণা চলছে। এই গাছের সাদা ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।”

পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে ১৫ টি বিরল পলাশ গাছের সন্ধান পেয়েছে বনদপ্তর। নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার তিন রঙা পলাশ নিয়ে বই লিখেছেন রাজ্যের উপ উদ্যানপালন অধিকর্তা ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া। তিনি বলেন, “এই সাদা পলাশ বিরল। পুরুলিয়া ছাড়া আর কোথাও এটা আছে কিনা তা এখনও আমাদের সন্ধানে নেই। পলাশের এই গাছের রসে উপক্ষার, গ্যালিক ও ট্যানিক অ্যাসিড থাকে। এই রসের প্রভাবে বেশ কিছু দূরারোগ্য ব্যাধির নিরাময় হয়। এমনকি ক্যানসারের ব্যাধি দূর করতে সাদা পলাশ নিয়ে গবেষণা চলছে। এছাড়া বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ ও তার রস অর্গানিক কাজে ব্যবহার হয়। পুরুষের যৌন বর্ধক ওষুধও তৈরি হয় এই গাছ থেকে। ফলে সাদা পলাশ প্রচুর দামে বিক্রি হয়। সাদা পলাশের বংশবিস্তার যাতে ব্যাপক হারে করা যায়, সেই বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।”

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement