কৃষ্ণকুমার দাস: চিকিৎসা, শুশ্রূষার মাধ্যমে পুনর্জীবন দান। আর এই কাজেই নজির গড়ল রাজ্য সরকার। কোনও মানুষ নন, ‘রি-প্ল্যান্টেশন’(Re-Plantation) এর মাধ্যমে কলকাতায় পুনর্জীবন ফিরে পেল তিনশোরও বেশি প্রবীণ বৃক্ষ। এদের প্রত্যেকটাই প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফানে ( Cyclone Amphan) উপড়ে পড়েছিল। অক্সিজেনের জোগান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে ফের তাদের তরতাজা করে তোলা হয়েছে। টানা চার মাসের এই ‘বৃক্ষ-চিকিৎসা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে কেএমডিএ, পুলিশ, পূর্ত, কলকাতা পুরসভা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
ভবানীপুর রয়েড স্ট্রিটের ১৩০ বছরের বটগাছটা যৌবন ফিরে পাওয়ায় বেজায় খুশি স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকরা। ২০ মে রাতে আমফানে উপড়ে পড়া গাছটা ‘ভেন্টিলেশন’ চলে গিয়েছিল, কিন্তু পুরসভা কার্যত ‘ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ দিয়ে ফিরিয়েছে শতাব্দী পেরিয়ে আসা বটবৃক্ষকে। ১৮০ কিলোমিটারের ঝড় সেদিন বটের সঙ্গী অশ্বত্থকেও উড়িয়ে নিয়ে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। সেও নবজীবন পেয়েছে একই ফর্মুলায়, পুনঃরোপণে শরীর থেকে ছেড়েছে গোছা গোছা কচিপাতা। পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্যোগী পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “শহরে অক্সিজেনের জোগান বৃদ্ধি করতেই আমফান ক্ষতিগ্রস্ত গাছের পুনঃরোপণ করেছিলাম। কলকাতায় যত ‘রি-প্ল্যান্টেশন’ হয়েছিল তার ৯৯ শতাংশ নতুন পাতা ছেড়েছে, শহরে অক্সিজেনের জোগান দিচ্ছে।”
আমফানে কলকাতায় ১৬ হাজারের বেশি গাছের ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ গাছ কাটা হলেও তিনশোর বেশি গাছ ‘রি-প্ল্যান্টেশন’এর উদ্যোগ নেন স্বয়ং পুরমন্ত্রী। কেএমডিএ প্রকল্পে রবীন্দ্র সরোবরে ১১৪টি গাছের পুনঃরোপণ কর্মসূচির সূচনা করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ অর্জন বসুরায় জানান, “সরোবরে ১১১টি গাছে কচি সবুজ পাতা এসেছে, ডালপালা মেলেছে। কেএমডিএ’র অধীন উত্তরের সুভাষ সরোবরে ৩৭টি পুনঃরোপিত হলেও ৩৩টি বেঁচেছে।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৫টি বড় গাছ ‘রি-প্ল্যান্টেশন’ হয়েছে, সবকটিই আগের মতো সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। চেতলাতেও ডজনখানেক গাছ রি-প্ল্যান্টেশনের পর ঘন সবুজে ভরেছে। ভবানীপুর নর্দার্ন পার্ক, রয়েড স্ট্রিট, জাস্টিস চন্দ্রমাধব রোড, চক্রবেড়িয়া রোড, হেসাম রোড পল্লিতে ২০টি বড় প্রাচীন গাছকে ‘রি-প্ল্যান্টেশন’ করে নজির গড়েছেন স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর অসীম বসু। তার মধ্যে যেমন ১৩০ বছরের পুরনো বট বা শতাব্দী প্রাচীন অশ্বত্থ গাছ রয়েছে, তেমনই আছে ২০/২২ বছর বয়সি কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছ। সেনার অনুমতি নিয়ে গড়ের মাঠের চারপাশে উপড়ে পড়া ১১৩টি বড় গাছের শিকড়ে রাসায়নিক ট্রিটমেন্টের পর পুনঃরোপণ করে বাঁচিয়ে তুলেছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ বিজয় আগরওয়াল। ‘রি-বিল্ড বেঙ্গল’ কর্মসূচিতে যৌথভাবে সাহায্য করেছে পুলিশ ও পূর্ত দপ্তর। প্রতিমাসে পুনঃরোপিত গাছে হরমোন ট্রিটমেন্ট ও জৈব সার দেওয়া হচ্ছে। গাছের ক্ষতে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া রুখতে চলছে রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট। প্রতি ১৫ দিনে একবার পরীক্ষা করেন পুরসভার উদ্ভিদবিদরা।
ছেলেবেলা থেকে যে বট এবং অশত্থকে দেখে, তার নিচে খেলা করে বড় হয়েছেন ভবানীপুরের রয়েড স্ট্রিটের চন্দন মুখোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ ঘোষ, সুমিত রায়ের মতো প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। আমফানে এলাকায় অক্সিজেনের দুই জোগানদাতা বট আর অশ্বত্থ উপড়ে পড়েছিল। কিন্তু দুই গাছই পুনঃরোপণ করে বঁাচাতে এগিয়ে আসেন কাউন্সিলর অসীম। চক্রবেড়িয়া রোড থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে হেশাম পার্কে পুনঃরোপিত হয় অশত্থ। অসীমের কথায়, “উপড়ে পড়া গাছগুলি রিপ্ল্যান্টেশন করে বাঁচিয়ে তোলা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। পুনঃরোপিত সেই গাছগুলিতে ফের নতুন পাতা ছাড়ছে, গ্যালন গ্যালন অক্সিজেন দিচ্ছে জেনে বাসিন্দারা খুশি।”
ছবি: পিন্টু প্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.