টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: গ্রামের মেঠো রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন এক বৃদ্ধ। হাতে মস্ত একটি কোদাল। মলিন, শিরা ওঠা হাতে আগলে রেখেছেন গাছ। বাঁকুড়ার সুরপা নগর গ্রামে ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ ‘গাছদাদু’ নামে অতি পরিচিত। কে না চেনেন তাঁকে? নিজের হাতে মাটিতে গাছ পুঁতে দেওয়ার অভ্যেসটা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন এই বয়সেও। করোনা আবহেও তাতে ছেদ পড়েনি। কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার গ্রামে গিয়ে এই সময়ে বৃক্ষরোপণ করেছেন ‘গাছদাদু’ অচিন্ত্য সুরাল। সঙ্গী বর্তমান প্রজন্মের কয়েকজন।
কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন আধিকারিক বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের বাসিন্দা অচিন্ত্যবাবু। এখন থাকেন কলকাতায়। কিন্তু শেকড়ের টানে বাঁকুড়ার প্রান্তিক গ্রামে ছোটবেলা থেকেই যাতায়াত ছিল তাঁর। সুরপা নগরের সঙ্গে তাঁর যে নাড়ির টান। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এই গ্রামের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি আজও টাটকা তাঁর কাছে। গ্রামের মাঝে টলটলে জলে ভরা পুকুর, বকুল গাছে পাখির কলতান, বিকেলের নরম রোদ, পরিচ্ছন্ন ঢালু মাঠ, মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে হলুদ হয়ে যাওয়া বিচুলি পাতার মাথা নাড়ানো – চোখ বন্ধ করলে আজও যেন সেই ছবি দেখতে পান ৬৭ বছরের ‘গাছদাদু’।
গাছেদের সঙ্গে আত্মীয়তা সেই ছোট্টবেলা থেকে। বাবার কাছে এই কাজে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। শুধুমাত্র গাছের অপরিসীম গুরত্বের কথা ভেবে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওইটুকু বয়েসেই। তারপর আস্তে আস্তে চামড়ায় ভাঁজ পড়লেও গাছ লাগানোর এই অভ্যেস, ইচ্ছে এক মুহূর্তের জন্যও টাল খায়নি। এত বছর ধরে একার চেষ্টায় কলকাতা, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন অচিন্ত্যবাবু। তাঁর হাতযশে আজ বহু জায়গায় ছায়া দেয় সারি সারি বৃক্ষের দল। রাস্তার ধার, সেচ খাল, পুকুরপাড় — সমস্ত জায়গা ভরিয়ে দিয়েছেন গাছে।
একা তিনি নন, তাঁর এই অভ্যেস তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের মধ্যেও। একদল তরুণ তুর্কি ভিড় করেছে তাঁর কাছে। নাম ‘গ্রিন আর্মি’। অচিন্ত্যবাবুর সঙ্গেই আরও বেশি সংখ্যক গাছ লাগাতে চান তাঁরা। গোটা বিশ্ব আজ করোনায় কাবু। দোসর প্রকৃতির নানা ভয়াবহ আচরণ। সেসব রুখতে ‘গাছদাদু’র এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। প্রচারের তোয়াক্কা করেন না, বরং শান্তভাবে কাজটুকু করে যেতে চান অচিন্ত্যবাবু। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ছায়া দিতে এই বাংলায় এমন ‘বৃক্ষপুরুষ’ যেন ফিরে ফিরে আসেন, এমনই মনে করেন তাঁর তৈরি ‘গ্রিন আর্মি’র সদস্যরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.