সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কাঠমাফিয়াদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বেড়েছে জঙ্গল। আর সেই জঙ্গলের শ্রীবৃদ্ধিতে বাড়ছে জীববৈচিত্র্য। বাংলায় গত ১৫ বছরের বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ২৮টি। ২০২৫ সালে ব্যাঘ্র শুমারির রিপোর্টে এই ছবিই ধরা পড়েছে। সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা সেঞ্চুরি পার করে ফেলল! শুমারির তথ্য বলছে, ২০১০ সালে এ রাজ্যে বাঘ ছিল ৭৪ টি। ২০২৫-এ তা ১০২।
তবে ব্যতিক্রম ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের বাঘিনী জিনাতের ফেলে আসা পথে ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে আসা ভবঘুরে জিনাতসঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি। ২০২১-এর মতো এবারের ব্যাঘ্র শুমারিতেও তার ঠাঁই হয়নি। তবে অরণ্য ভবন ওই জিনাত সঙ্গীকে পশ্চিমবঙ্গের বলেই দাবি করেছে। তাই শুক্রবার সকালে জিনাতসঙ্গীর ডেরা রাইকা পাহাড়ের জঙ্গল পরিদর্শন করে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল তথা চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় জানান, আগামীদিন ওই জঙ্গলকে ‘ইনভায়োলেট’ (বন্যপ্রাণের জন্য সুরক্ষিত) ঘোষণা করা হবে। কারণ, বাঘিনী জিনাত থেকে তার সঙ্গী গত ২ মাসে এই রাইকা পাহাড়ে বসত করলেও ওই বন্যপ্রাণকে কোনওরকম উত্ত্যক্ত করা হয়নি।
রাজ্যের বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘ গণনায় বাংলায় যে ১০২ টি বাঘ ধরা পড়েছে তার মধ্যে সুন্দরবনেই ১০১টি। আরেকটি রয়েছে উত্তরবঙ্গের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে। ২০২১-২২ সালে সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল ১০০। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে আসা জিনাতসঙ্গী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কেন এবারও গণনার আওতায় এল না? এনিয়ে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বলছেন, “ব্যাঘ্র শুমারিতে নাও ধরা পড়তে পারে। তবে ওই বাঘ এখন পশ্চিমবঙ্গের। রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলের যা চরিত্র তাতে বাঘ থাকার আদর্শ। অতীতেও যদি বাঘ এসে থাকে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাঘ সেই জঙ্গলেই থাকে যেখানে নিজেকে সে আড়াল করতে পারবে। তা রয়েছে রাইকায়। এখানকার জঙ্গল এতটাই ঘন যে ১০ মিটার দূর থেকে আর কিছু দেখা যায় না। পুরুলিয়ার জঙ্গলে যেভাবে বন্যপ্রাণরা ফিরে আসছে তাতে আগামীদিনে অভয়ারণ্য হতেই পারে।”
এদিন রাইকা পাহাড়তলির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তিনি ওই জঙ্গলের নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। জিনাতসঙ্গীর সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরেন। যৌথ বন পরিচালন সমিতিরা সদস্যরা রাজ্যের বনকর্তাকে জানিয়ে দেন, এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে তারা আগলে রাখবেন। রাজ্যের বনবিভাগের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “জঙ্গল বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাংলায় বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৫-এর ব্যাঘ্র গণনা অনুযায়ী বাংলায় বাঘের সংখ্যা ১০২।” এদিন বান্দোয়ানের কুইলাপালে জিনাত বন্দি সাফল্যে দ্বিতীয় ধাপে ৫২ জনকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শংসাপত্র প্রদান করেন বনমন্ত্রী। প্রথম ধাপে অরণ্যভবনে দেওয়া হয়েছিল ৩ জনকে।
এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটির প্রথম ছবি ধরা পড়ে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ছত্তিশগড়ের বলরামপুরের গুরু-ঘাসিদাস ন্যাশনাল পার্কে। তারপর মে-জুন মাসে ঝাড়খণ্ডের পালামৌতে ট্র্যাপ ক্যামেরায় বন্দি হয় এই বাঘ। এদিন এই বাঘটি ছিলো তার নতুন টেরিটরি রাইকা-দলমার পাহাড়-জঙ্গলে। ওই এলাকার চিমটিতে তার একাধিক পদচিহ্ন মেলে। পুরুলিয়ার জঙ্গল বণ্যপ্রাণ সমৃদ্ধ হওয়ায় তাদের মোকাবিলায় পরিকাঠামো বাড়াতে চলেছে রাজ্য। চার চাকার গাড়ি, মোটরবাইকের পাশাপাশি জাল, ট্রাঙ্কুলাইজার গান ও সেইসঙ্গে রেঞ্জ আধিকারিকদের হাতে সার্ভিস গান ফিরিয়ে দেওয়ারও ইঙ্গিত দেন বনমন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.