সৌরভ মাজি, বর্ধমান: আবেগ দিয়েও রোখা যাবে দুর্ঘটনা। অবিশ্বাস্য ঠেকছে? কিন্তু এমনই এক অভিনব ডিভাইস বা যন্ত্র আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিল পূর্ব বর্ধমানের মেমারির এক ছাত্রী। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিগন্তিকা বসুর এই আবিষ্কার ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে বিজ্ঞান মেলায় সম্মানিত হয়েছে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আহমেদাবাদ)-এ তার এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র পাঠের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে মেমারির মেধাবী ছাত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এই ডিভাইসের পেটেন্টও পেয়ে গিয়েছে দিগন্তিকা।
মেধাবী ছাত্রীটি জানিয়েছে, মানুষের আবেগের সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে এই ডিভাইসটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। খরচ হয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা। কোনও মোটরবাইক বা গাড়িতে এই যন্ত্র ব্যবহার করলে চালকের গাড়িচালনার গতিবিধির পর্যবেক্ষণ করবে এই যন্ত্র। তারপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের সাহায্যে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ইমোশনাল স্পিচের মাধ্যমে চালককে নিয়ন্ত্রণ করবে বা সতর্ক করবে এই যন্ত্র।
এমনকী চালককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে চালকের শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোন ক্ষরণ ত্বরাণ্বিত করিয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার প্রোগ্রামিংও করা হয়েছে দিগন্তিকার তৈরি যন্ত্রে। পাশাপাশি, এই যন্ত্রের ব্যবহারে গাড়ির বা বাইকের বায়ুদূষণও কম হবে। এই যন্ত্রটির পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে – টেকনোলজি উইথ ইমোশন বেসড অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ফর ভেহিক্যালস।
মেমারির ভিএম ইনস্টিটিউশন (ইউনিট ২)-এর একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিগন্তিকা বসু। বাবা সুদীপ্ত বসু ও মা শুভ্রা বসু। সুদীপ্তবাবু জানান, এই ডিভাইস রাজ্য সরকার আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় আউটস্ট্যান্ডিং ৩-এ স্থান পেয়েছে। এই ডিভাইস উদ্ভাবনের জন্য দিগন্তিকার স্কুলকে রাজ্য সরকারের তরফে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের স্টার্ট-আপ প্রকল্পেরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই দিগন্তিকার নয়া উদ্ভাবনী। আইআইএম-আহমেদাবাদ ছাড়াও কলকাতার বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে আমন্ত্রণ পেয়েছে দিগন্তিকা।
মেমারির এই মেধাবী ছাত্রীর কীর্তি খুব কম নয়। দেশের সেরা উদ্ভাবকের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছে পরপর দু’বার। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয় সে। এর আগে দিগন্তিকার আরও কয়েকটি উদ্ভাবনী মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুন্দরবনে মধু সংগ্রহকারীদের সুরক্ষায় বিশেষ ধরণের চশমা বানিয়েছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি, যার সাহায্যে পিছন দিকে মুখ না ঘুরিয়েও সব দেখতে পাবেন তাঁরা।
এরপর দিগন্তিকা ডাস্ট কালেক্টিং অ্যাটাচমেন্ট ফর ড্রিল মেশিন তৈরি করে। এই যন্ত্রের সাহায্যে ড্রিলিংয়ের কোনও কাজ করলে ধুলো উড়বে না। ফলে শ্রমিকের শরীরে সেই ধুলো প্রবেশ করবে না। কলার সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের জন্য বিশেষ স্মার্ট সার্ভিক্যাল কলার বা বেল্ট তৈরি করেছে। যার সাহায্যে রোগীকে প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তি বা ঘেমেনেয়ে কষ্ট পেতে হবে না। তার নবতম আবিষ্কারটিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূ্র্ণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.