সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আপনার গ্রহে কি নুন আছে? পৃথিবীতে তো আলবাৎ আছে। না হলে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কীভাবে? কিন্তু জানেন কী? একসময় পৃথিবীর পড়শি গ্রহ, মঙ্গলেও নুন ছিল। আরও স্পষ্ট করে বললে, লবণাক্ত জলের হ্রদ ছিল। প্রাগৈতিহাসিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হিসাবে যা পরে শুকিয়ে যায় এবং ‘ক্রেটার’ বা গহ্বরে পরিণত হয়। কিন্তু জল শুকিয়ে গেলেও লবণের পুুরু অধঃক্ষেপণ রয়ে যায় গহ্বরের গায়ে শুষ্ক পলির স্তরে। অতি সম্প্রতি মঙ্গলের ‘গেল ক্রেটার’ বা ‘সাটন আইল্যান্ড’ থেকে এই লবণের আস্তরণই আবিষ্কার করেছে নাসার কিউরিওসিটি রোভার। আর তাতেই বোঝা গিয়েছে, লাল গ্রহেও সম্ভবত কোনও একসময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।
সাত বছর। হ্যাঁ, দীর্ঘ সাত বছর ধরে মঙ্গলের এই ‘গেল ক্রেটার’ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে কিউরিওসিটি রোভার। তারপরই জানিয়েছে যে, আজ থেকে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে ক্রেটারটি তৈরি হয়েছিল। চলতি সপ্তাহের নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্বে ছিল ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির একটি দল, যা জানাচ্ছে যে, প্রায় দেড়শো কিলোমিটার চওড়া ‘গেল গ্রেটার’ থেকে যে আনুমানিক দেড়শো মিটার উচ্চতার পলল পাথর উদ্ধার হয়েছে, তাতে সালফেট জাতীয় লবণের আধিক্য ছিল। আরও স্পষ্ট করে বললে প্রাচুর্য ছিল ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম সালফেটের। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ওই ‘ক্রেটার’ বা গহ্বরের গায়ে লবণের পুরু আস্তরণ মিলেছে। যা থেকে তাঁদের ধারণা, সম্ভবত হ্রদের জল যেখানে যেখানে অগভীর ছিল, সেখানেই লবণ অধঃক্ষেপিত হয়েছে। আর মঙ্গল গ্রহে এই লবণ মেলার পর থেকেই আরও প্রকট হয়েছে সেখানে প্রাণের অস্তিত্বও থাকার সম্ভাবনা। কারণ এই আবিষ্কার থেকে গবেষকদের অনুমান, জলবায়ুর বিচারে পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গলের খুব বেশি ফারাক নেই। কারণ পৃথিবীর বুকেও লবণাক্ত জলের হ্রদ রয়েছে এবং তাকে ঘিরে জনবসতিও বিস্তৃত হয়েছে। তার উপর আবার সেই লবণ সালফেট জাতীয় হওয়ায় সেই সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়েছে।
গবেষকদলের নেতৃত্বে থাকা উইলিয়াম র্যাপিন জানাচ্ছেন, “বছরের পর বছর ধরে কীভাবে মঙ্গলের জলবায়ু, মৃত্তিকা তথা গোটা পরিবেশের বিবর্তন ঘটেছে, তা সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য আহরণ করতেই আমরা গাল ক্রেটারকে বেছে নিয়েছিলাম। আর সেই কাজে আমরা প্রাথমিক সাফল্য অবশ্যই অর্জন করেছি।” প্রসঙ্গত, নাসার কিউরিওসিটি রোভার আরও জানিয়েছে যে, গহ্বরের একেবারে নিচে এমন কিছু পলল পাথরেরও হদিশ মিলেছে, যাতে লবণ ছিল না। যা থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা, সম্ভবত গহ্বরের একেবারে তলায় কোনও মিষ্টি জলের হ্রদেরও অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু জল যত উপরের দিকে উঠেছে, তত তাতে লবণের আধিক্য বাড়তে দেখা গিয়েছে। ঠিক যেমন পৃথিবীতে সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হলে লবণের অধঃক্ষেপণ হয়, ঠিক সেটাই সম্ভবত ঘটেছে মঙ্গল গ্রহের ক্ষেত্রেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.