সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাশূন্যে থাকা গ্রহাণু থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরল নাসার (NASA) মহাকাশযান। রবিবার উটাহতে সঠিকভাবে অবতরণ করেছে ‘ওসিরিস-রেক্স’। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে মহাকাশযান নেমে আসার লাইভ স্ট্রিম করেছিল নাসা। ‘ওসিরিস-রেক্স’ মাটি ছুঁতেই এই অভিযানকে সফল বলে ঘোষণা করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে এই অভিযান শুরু করেছিল নাসা। সাত বছর পর সেই অভিযান সম্পন্ন হয়েছে।
ঠিক কী কাজ ছিল ‘ওসিরিস-রেক্স’-এর? তার টার্গেট ছিল বেন্নু (Bennu)। ‘খনিজের ভাণ্ডার’ ওই গ্রহাণু থেকে এক টুকরো পাথুরে ‘মাংস’ খুবলে নেওয়ার জন্য মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল যানটি। ২০২০ সালে সেই কাজ নির্বিঘ্নে সেরে ফেলে ‘ওসিরিস-রেক্স’। তারপরেই পৃথিবীতে ফিরে আসার পালা শুরু করে মার্কিন মহাকাশযান। সাত বছর পরে সফল অবতরণ করল ‘ওসিরিস-রেক্স’। বিশ্বে এই প্রথমবার বেন্নু গ্রহাণুর উপাদান সংগ্রহ করতে সফল হল কোনও মহাকাশযান।
কী এই বেন্নু? ব্যাস পাঁচশো মিটার। পৃথিবীর সবথেকে কাছে থাকা একটি গ্রহাণু। যা প্রতি ছ’বছরে একবার পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়ে তার খুব কাছ ঘেঁষে চলে যায়। কিন্তু কেন নাসার এই অভিযান? আগামী ২১৭৫ থেকে ২১৯৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে বেন্নু। অর্থাৎ প্রায় দেড়শ থেকে পৌনে দু’শো বছর পর। মনে করা হয়, এই বেন্নুর জন্যই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে ডাইনোসররা। আবার সে আছড়ে পড়লে দেড় হাজার মিটার গভীর ক্ষত সৃষ্টি হবে পৃথিবীর বুকে।
বেন্নুর এত শক্তির উৎস কী? এই কারণ অনুসন্ধান করতেই নাসার বিশেষ মহাকাশ যান ওসিরিস রেক্স পাড়ি দেয় ২০১৬ সালে। গত কয়েক বছরের গবেষণায় জানা গিয়েছে, বেন্নুর পিঠের কঠিন রূপ গড়ে উঠেছে কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সাহায্যে। যা প্রাণের উৎসের অন্যতম কারণ। এর বিস্তারিত বিশ্লেষণের জন্যই তার পিঠের অংশ থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে পাথুরে অংশ।
গত ২০২০ সালের অক্টোবরে বেন্নুর খুব কাছে পৌঁছে যায় ওসিরিস। তার আগে দীর্ঘ সময় যানটি টানা চক্কর খেয়েছিল বেন্নুর কক্ষপথে। তারপর গ্রহাণুটির পিঠ ছুঁয়ে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডে একটি পোগো স্টিকের সাহায্যে খুবলে নিয়েছিল প্রায় ৬০ গ্রাম নুড়ি-পাথর। সেই নমুনা এবার হাতে পাবেন বিজ্ঞানীরা। ওসিরিসের মধ্যে থাকা মাইক্রোওয়েভ রেডিওর একটি বড় অংশ প্রস্তুত করেছেন বিজ্ঞানী প্রতাপ প্রামাণিক। তিনি জানাচ্ছেন, ওসিরিসের কাজটা ছিল অত্যন্ত কঠিন। নাসার বিজ্ঞানীদের তাই দিন কাটছিল উৎকণ্ঠায়। কেননা গ্রহাণুটির পৃষ্ঠতলটি যেমন ভাবা গিয়েছিল তেমনটা বাস্তবে ছিল না। তাই শেষ মুহূর্তে রিপ্রোগ্র্যাম করা হয়েছিল সব কিছু। আর সেই পরিবর্তন সম্পূর্ণ সফল হওয়ায় অনায়াসেই এসেছে সাফল্য। এবার ওসিরিসকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সকলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.