গৌতম ব্রহ্ম: একই সহজলভ্য শক্তির উৎস থেকে হরেক স্বাস্থ্যযন্ত্র। কোনওটা কাজ করে অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে, কোনওটা ইনফ্রারেড আলোয়। জ্বালানি সব ক্ষেত্রেই এক। সৌরবিদ্যুৎ। করোনা (Coronavirus) মোকাবিলার এমন হাফ ডজন অস্ত্র বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন নদিয়ার (Nadia) এক প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক।
শুভময় বিশ্বাস। বাড়ি নদিয়া জেলার বগুলা কলেজপাড়ায়। বগুলা হাঁসখালি পূর্বচক্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই তরুণ শিক্ষকের একের পর এক নজরকাড়া উদ্ভাবন দেখে অনেকেই তাঁর মধ্যে লাদাখের সোনম ওয়াংচুকের ছায়া পাচ্ছেন। শুভময় এর আগে সোলার বাইক বানিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে বাইকটি চালিয়েছেন। পাঁচ ঘণ্টা সূর্যের আলোয় রাখলে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে সেই দ্বিচক্রযান। সবচেয়ে বড় কথা, হেলমেট না পরে কিংবা মদ খেয়ে ওই বাইক চালানোর উপায় নেই। জোর করে চালানোর চেষ্টা করলে নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে এসএমএস চলে যাবে, এমনই কারিকুরি। এহেন কয়েকশো সামগ্রী রয়েছে শুভময়ের ভাঁড়ারে। সাম্প্রতিক সংযোজন ‘সোলার ইনফ্রা অটোমেটিক স্যানিটাইজার’।
সৌরশক্তির জোরে চালিত যন্ত্রটি ইনফ্রা রেড রশ্মিতে হাত স্যানিটাইজ করবে। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসবে ‘অ্যান্টিভাইরাল তরল’-এর বাষ্প। এই জোড়া ফলায় দু’সেকেন্ডে হাত স্যানিটাইজড হয়ে যাবে। যন্ত্রে ভয়েস অ্যালার্ট থাকছে। সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেই বলবে, ‘প্লিজ, স্যানিটাইজ ইওর হ্যান্ড। মেনটেন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’। শুভময় জানালেন, “যন্ত্রে একুশ ভোল্টের সোলার সেল ব্যবহার করা হয়েছে। যা প্রতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২৫ ওয়াট ডিসি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে সাময়িকভাবে সঞ্চয় করতে সক্ষম। উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে ভয়েস অ্যালার্ট ও স্যানিটাইজেশনের কাজে। রাতে যন্ত্র চলবে সঞ্চিত বিদ্যুতে। জ্বলবে আলো। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বাইরে রাখলেই ফুল চার্জ। আর ডিসি হওয়ায় শিশুদের জন্যও নিরাপদ।
শুভময় উদ্ভাবিত যন্ত্রটিতে আটটি ইনফ্রা রেড লাইটগান লাগানো রয়েছে। মেশিনের সামনে হাত পাতার সঙ্গে সঙ্গে যেগুলো থেকে রশ্মি বেরিয়ে হাতকে জীবাণুমুক্ত করে দেবে। শুভময় জানালেন, বাজারঘাট-সহ সর্বত্র এটি বসানো যাবে। ঘরের ভিতর জানালার পাশে বসিয়ে রাখলেও কাজ করবে। যন্ত্র বানাতে খরচ মোটামুটি হাজার তিনেক টাকা। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে যা দেড় থেকে দু’হাজারের মধ্যে চলে আসবে বলে উদ্ভাবকের দাবি।
হেদুয়ার ‘আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বোস স্মারক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ জানালেন, লকডাউনের মধ্যেই করোনা বধে ছ’টি সামগ্রী তৈরি করেছেন শুভময়। ‘সোলার ইনফ্রা অটোমেটিক স্যানিটাইজার’ তো রয়েছেই। রয়েছে, সোলার আলট্রা ভায়োলেট সি টানেল গেট, অটোমেটিক অর্গানিক ননটক্সিক স্যানিটাইজার, নভেল হাইব্রিড ডিসইনফেকটর, স্বাস্থ্যবিধান গেট ও ‘পোর্টেবল ইউভিসিআইআর ডিসইনফেকশন গান’। শেষেরটিকে করোনা মারার বন্দুক বলা যেতে পারে। যে কোনও মোবাইল চার্জার দিয়ে এটি চার্জ করা যাবে। এ দিয়ে যে কোনও জায়গা জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব, তা সে বাসের সিট হোক বা মানিব্যাগ, মোবাইল। জানা গিয়েছে, পেটেন্টের জন্য দু’টি সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.