রিন্টু ব্রহ্ম,কালনা: কথায় আছে, ‘চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম’। নিজের ঘরে না হোক, বাড়ির সামনের রাস্তা নিজে ঝাড়ুহাতে পরিষ্কার করে সেই প্রবাদটিরই বাস্তব রূপ দিচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলির সনৎ মণ্ডল। রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে কোনও পারিশ্রমিক পান না। ঝাড়ুদারের কাজেও নিযুক্ত নন তিনি। তবুও প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে টানা চার কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করেন সনৎবাবু।
পূর্বস্থলি থানার মাঠ থেকে শুরু করে কাষ্ঠশালি পর্যন্ত রাস্তায় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা আবর্জনা, প্লাস্টিক সরিয়ে ফেলেন ঝাড়ু দিয়ে। গত চার বছর ধরে এটাই নাকি নিত্যদিনের রুটিন কাজ সনৎবাবুর। স্থানীয়রা এই ভাবেই দেখে আসছেন তাঁকে। অপরিষ্কার রাস্তা পছন্দ করেন না। তাই কোনও দিক না ভেবে এভাবেই ‘স্বচ্ছ বাংলা’ গড়ার কাজ করে যাচ্ছেন সনৎ মণ্ডল। তাঁর এমন কাজেই প্রশংসা করছে পূর্বস্থলির সাধারণ মানুষ থেকে পঞ্চায়েত।
পূর্বস্থলির ধাড়াপাড়ায় বাড়ি বছর চল্লিশের সনৎবাবুর। সেখানে একটি আসবাবপত্রের দোকান চালান তিনি। সেই দোকান খোলার আগেই রোজ নিজের এলাকার পরিষ্কার রাখেন। তাঁর কথায়, “অপরিষ্কার রাস্তা আমার পছন্দ নয়। তাই ভাবি, নিজেই রাস্তাগুলি পরিষ্কার করে ফেলি। সেই থেকেই প্রতিদিন রাস্তা পরিষ্কার রাখি। স্থানীয় মানুষরা আমাকে খুবই সম্মান দেন। খুবই ভাল লাগে। অন্যদেরও এগিয়ে আসতে বলি।” তিনি জানান, ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল সমাজের জন্য কাজ করবেন। সেই ভাবনা থেকেই এই কাজ করা শুরু করেন তিনি। জানা গিয়েছে, নবদ্বীপ কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাড়ির পাশে একটি ছোট দোকান শুরু করেন।
সনৎবাবুর ভাই সমীর মণ্ডল বলেন,”দাদার এই কাজ আমরা প্রথমে ভালভাবে নিতাম না। কিন্তু কিছুদিন পর সবাই মিলে উৎসাহ দেয়। তাই আর আপত্তি জানাইনি।” তাঁর এই কাজের প্রশংসা করে পূর্বস্থলি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” আমিও শুনেছি ওই ব্যক্তির এই কাজের কথা। খুবই প্রশংসনীয় কাজ।” পূর্বস্থলির স্টেশন ম্যানেজার অবনীভূষণ বালা, স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ বিশ্বাস, শিক্ষক সন্দীপ ভট্টাচার্য, মিঠুন ঘোষ, সুবোধ ঘোষ, রনকালী মোদকরা বলেন, “আমরা প্রায়ই ওনাকে দেখি রাস্তা পরিষ্কার রাখতে। তাঁর এই কাজ অন্যদের উৎসাহ দেবে।” এভাবে নিজের এলাকা নিজেই পরিষ্কার রেখে সমাজে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সনৎ মণ্ডল, তা বলাই বাহুল্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.