বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: মেহগনি গাছটির বয়স প্রায় ১২ বছর। শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে বিশাল আকার ধারণ করে নদিয়ার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চত্বরে ফাঁকা জায়গায় নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। হাসপাতালের ফাঁকা জায়গায় উন্নয়ন প্রকল্পে একটি ১০০ বেডের বড় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল গাছটি। সেই ভবন তৈরির প্রয়োজনে বনদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে গাছটিকে কেটে ফেলার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিজেদের হাতে শিশু অবস্থায় লাগিয়ে পরিচর্যা করে বেড়ে ওঠা সেই গাছটিকে কেটে ফেলার পক্ষে বিন্দুমাত্র মত ছিল না রানাঘাটের ‘নেচার ফার্স্ট’ নামে পরিবেশ সংগঠনের কর্মীদের।
তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাছটিকে জীবন্ত অবস্থায় গোড়া থেকে তুলে বেশ কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে পুন:রোপণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। সেই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদ। বুধবার মেহগনি গাছটিকে শিকড়শুদ্ধ গোড়া থেকে তুলে প্রায় ৫০ মিটারেরও বেশি দূরে নিয়ে গিয়ে পুন:রোপন করা হয়। দেওয়া হল গোবর সার এবং সেই সঙ্গে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ। আগামী অন্তত ৭দিন গাছটিকে স্নান করিয়ে সম্পূর্ণ পরিচর্যা করবেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের স্থির বিশ্বাস, জীবন্ত মেহগনি গাছটি তার স্থান পরিবর্তন করলেও নতুন জায়গায় সে স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকবে এবং আরও বড় হবে। আর এভাবেই রানাঘাট পুলিশ মর্গের সামনের ফাঁকা জায়গায় মেহগনি গাছটি ফিরে পেল নতুন জীবন।
প্রায় ১২ বছর আগে রানাঘাটের পরিবেশ কর্মীরা রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে শাল, সেগুন, মেহগনি-সহ বিভিন্ন রকমের গাছ লাগান। ‘নেচার ফার্স্ট’ নামে পরিবেশ সংগঠনের লাগানো মেহগনি গাছটি ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বুধবার জেসিবি মেশিন দিয়ে গাছটিকে গোড়া থেকে মাটি খুঁড়ে তুলে ৫০ মিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। গাছ বাঁচার জন্য দেওয়া হয় নানারকমের ওষুধ। এছাড়াও গাছটিকে বাঁচানোর জন্য চলবে পরিচর্যা। স্থান পরিবর্তন হলেও গাছটি যাতে আগের মতোই বেঁচে আরও বড় হতে পারে, তার জন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি।
এক জায়গা থেকে জীবন্ত গাছ তুলে নিয়ে গিয়ে তা অন্যত্র আবার একইভাবে পুনঃরোপণ করার ব্যাপারে ঝক্কি নেহাত কম নয়। শিকড় বাঁচিয়ে মাটি খুঁড়ে গাছটিকে তুলে আনতে এবং অন্যত্র নিয়ে গিয়ে তা রোপন করতে অনেক মানুষের প্রয়োজন। খরচও কম নয়। এমন কাজের ভুক্তভোগী শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক সুশান্ত মঠ জানান, এর আগে শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদে একইরকম ভাবে বিশাল আকারের একটি নিমগাছ ও একটি কাঞ্চন গাছ প্রচুর লোকজনের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে তুলে অন্য জায়গায় পুনঃরোপণ করা হয়েছে। লোকজন নিয়ে মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার টাকা। দুটি গাছই বর্তমানে খুব ভালভাবেই রয়েছে। এরপর ধুবুলিয়াতেও একইরকমভাবে একটি গাছ এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.