ছবি: প্রতীকী
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বন্যপ্রাণী ও মানুষের (Man vs Wild) সংঘাত কমাতে বাংলার দেখানো পথে জঙ্গল করিডরের পরিকল্পনা স্বীকৃতি পেয়েছে গোটা দেশে। সেই পথে পা ফেলতে বাংলার করিডর পরিকল্পনা ঘুরে দেখতে চাইল মহারাষ্ট্র (Maharashtra)। রাজ্যের বনদপ্তরকে তারা চিঠি লিখে সেই আবেদন জানিয়েছে। অপেক্ষা নবান্নের (Nabanna) অনুমতির।
হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত কমাতে ইতিমধ্যে ৮টি করিডরের (Corridor) পরিকল্পনার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছে রাজ্য বনদপ্তর। বাংলা (West Bengal) লাগোয়া ৫টি রাজ্যে সংযোগকারী বনভূমিতে ৫ কিলোমিটার করে লম্বা সেই করিডর রাজ্য নিজের খরচে করছে। হাতি ছাড়াও যে কোনও পশুর সঙ্গেই ট্রেন বা মানুষের সংঘাত এড়াতে এই করিডর দারুণ উপযোগী ভূমিকা নেবে বলে প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রও জানিয়েছে। কেন্দ্রের আধিকারিকদের সঙ্গে সম্প্রতি কলকাতার (Kolkata) এক বৈঠকে সেই তথ্য জানিয়েছে তারা। বাঘ শুমারি, হাতি শুমারি, গণ্ডার শুমারির মতো কাজও চলছে বিভিন্ন রাজ্যে। তার মধ্যেই তথ্য তালাশে ধরা পড়েছে পশুতে-মানুষে সংঘাতের একটা বিস্তারিত ছবি।
মহারাষ্ট্রের বনদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাঘের সঙ্গে সংঘাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা সেখানে ৭৭। যেখানে সাকুল্যে সমস্ত পশুর সঙ্গে সংঘাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা মোট ১০৭। তার আগের বছর এই সংখ্যা ছিল মোট ৮৬। বাংলায় এই ছবিটা অনেকটা স্বস্তির। রাজ্য বনদপ্তর জানাচ্ছে, ২০২২-এ সব মিলিয়ে এ রাজ্যে পশু-মানুষে সংঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৮। তার আগের বছর সংখ্যাটা ছিল ১১৭। তার আগের বছর ১২৭। তার আগের বছর ১৫৭। অর্থাৎ চলতি বছরের হিসাব অনেকটা স্বস্তির। বাংলার এই খবরেই টনক নড়েছে বাকি রাজ্যগুলোর।
মহারাষ্ট্রের নানা অভয়ারণ্য বাঘের (Tiger) জন্যই গোটা দেশের নজরের কেন্দ্রে থাকে বছরভর। সেখানে ২০১৪-এ বাঘের সংখ্যা ছিল ১৯০। ৪ বছরে তা বেড়ে হয় ৩১২। চলতি শুমারে তা বেড়ে কম করে ৩৫০ হতে পারে বলে আশা সে রাজ্যের বনদপ্তরের। এর সঙ্গেই আশঙ্কাও বেড়েছে। পশুর সঙ্গে সংঘাত এড়াতে না পারলে গর্বের বাঘের সংখ্যা বেড়েও খুশি হতে পারবে না সরকার। সেক্ষেত্রে জঙ্গলনির্ভর জনবসতি স্থানান্তর প্রধান পদক্ষেপ বলে মনে করছে তারা। তার জন্য বিকল্প উপার্জনের ব্যবস্থাও রাজ্যকে করতে হবে। সঙ্গে চাই উপযুক্ত পরিকাঠামোর জঙ্গল করিডর। সদ্য হয়ে যাওয়া কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকে এ নিয়ে বাংলার যাবতীয় পরিকল্পনার প্রশংসা শোনা গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দেশে বন্যসম্পদ রয়েছে এমন রাজ্যের কাছে বাংলার নিদর্শনও তুলে ধরেছে কেন্দ্র। সেই প্রেক্ষিতেই এবার মহারাষ্ট্রের বনদপ্তরের আধিকারিকরা এ রাজ্যে এসে কাজ দেখতে চাইছেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ-সহ যে যে এলাকায় জঙ্গল করিডরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেইসব এলাকা পরিদর্শন করে হাতে-কলমে কাজ শিখে নিতে চাইছে তারা। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘নবান্নের অনুমতি পেলেই মহারাষ্ট্রের আধিকারিকরা এ রাজ্যে এসে কাজ দেখে যেতে পারেন। আমরা যেভাবে ৬টি রাজ্য নিয়ে জঙ্গল করিডর করছি, সেটা গোটা দেশের কাছে নিদর্শন হয়ে থাকবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.