Advertisement
Advertisement

Breaking News

Purulia

দূষণে কালিময় জীবন! ‘চাই না শিল্প’, পুরুলিয়ায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা বন্ধের দাবি গ্রামের মহিলাদের

প্রায় ২০ বছর ধরে এই কারখানা থেকে দূষণের জেরে প্রাণ ওষ্ঠাগত আড়শার কোরাং গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Local people demands close of sponge iron factory as it spreads pollution since many years
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:March 21, 2025 10:44 pm
  • Updated:March 21, 2025 10:53 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সকাল থেকে দুপুর, সন্ধ্যা থেকে রাত। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। ধান থেকে সবজির জমি – সব কুচকুচে কালো। তাই কালি খাচ্ছে মানুষ থেকে গবাদি পশুও। রোগ বাসা বাঁধছে ফুসফুসে। এক বছর, দু’বছর নয়। প্রায় ২০ বছর ধরে এটাই যেন নিয়তি হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়ার আড়শা ব্লকের কোরাং গ্রামের বাসিন্দাদের। পঞ্চায়েত, ব্লক এমনকি জেলা প্রশাসনে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। ওই কোরাং গ্রামের বিজয় স্পঞ্জ অ্যান্ড ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেডর ওই স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় গলগল করে বার হচ্ছে কালো ধোঁয়া। তাই দূষণে জেরবার মানুষজন ওই দূষণ নিয়ন্ত্রণ শুধু নয়। কারখানা বন্ধের দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন মহিলারা। শুক্রবার তারা কান্টাডি ফাঁড়ি ও স্থানীয় পুয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে নালিশ করেন। পাশাপাশি এও জানিয়ে দেন, এই সমস্যার সমাধান দ্রুত না হলে কারখানার বাইরে তাঁরা তালা ঝুলিয়ে দেবেন।

কোরাং গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা আগে কয়েকবার দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কালিমাখা জীবনেই সকাল থেকে রাত হয় প্রায় ১৮০০ মানুষজনের। তাই কয়েকদিন ধরে রাস্তায় নেমেছেন মহিলারা। রীতিমত প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিচ্ছেন – “কারখানা বন্ধ চাই, কালি মাখা জীবন থেকে বাঁচতে চাই।” ওই প্ল্যাকার্ড গুলিতে লেখা রয়েছে, ”পরিবেশ বাঁচাও, জীবন বাঁচাও। দূষণের হাত থেকে মাটি রক্ষা করো।”

Advertisement
দূষণের জেরে কারখানা বন্ধের দাবিতে মহিলাদের বিক্ষোভ। নিজস্ব ছবি।

বিক্ষোভরত মহিলা রামদাস নুনিবালা গোস্বামী, শিবানী মাহাতোরা বলছেন, “যখন থেকে এই কারখানা শুরু হয় তখন থেকেই দূষণ। বিগত ২০ বছরে আমরা যে কতবার কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলেছি তার হিসাব নেই। ওনারা শুধু বলেন, এরপর থেকে আর কালো ধোঁয়া বেরবে না। কিন্তু তা আর হয় না। আমরা পঞ্চায়েত, ব্লক, জেলা প্রশানকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। গত ৪ বছর ধরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সেই কারনেই আমরা বাধ্য হয়েছি পথে নামতে। আর আমরা কোন অনুরোধ করবো না। আমাদের দাবি এখন একটাই এই কারখানা বন্ধ করতে হবে।”

অথচ এই গ্রামের ২৫-৩০ জন বাসিন্দা ওই কারখানায় কাজ করে দিন গুজরান করেন। তবে তাঁরাও চাইছেন দূষণমুক্ত পরিবেশ। শুক্রবার বিক্ষোভে শামিল হওয়া বন্দনা গোস্বামী বলেন, “এদিন আমরা পঞ্চায়েতে গিয়েছি। পুলিশকেও জানিয়েছি। সমস্যা না মিটলে আমরা কারখানায় তালা ঝোলাব।” ওই এলাকার বাসিন্দা কোকিল গোস্বামী বলেন, “পরিস্থিতি এমন যে প্রতিদিন আমরা খাবারের সঙ্গে কালি খাচ্ছি। ফুসফুসে রোগ বাসা বাঁধছে। এমনি চললে তো সংক্রমণ হয়ে যাবে। মাঠের ঘাস এমন কুচকুচে কালো হয়ে থাকছে গবাদি পশু তা মুখে তুলছে না।” বাতাসে মিশে থাকা কালো দূষণ-এ পানীয় জলে যাতে কালি না মিশে যায় তাই কুয়োতেও ঢাকনা পড়েছে এই গ্রামে। প্রশ্ন উঠেছে কেন কারখানা কর্তৃপক্ষ দূষণ রোধে যন্ত্র ব্যবহার করছে না?

গ্রামের আরেক বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মাহাতোর দাবি, “ধানের ফলনও কালো হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে দাম পাচ্ছি না। যেখানে ২০০০ টাকা কুইন্টাল সেই জায়গায় মিলছে মাত্র ৮০০ টাকা। এই দূষণের জন্য বছরে ৫-৬ টা করে ভেড়া মরে যাচ্ছে।” এসব নিয়ে জেলার শিল্প সংক্রান্ত বিষয়ে দেখভাল করা পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজেশ রাঠোরের প্রতিক্রিয়া, “বিষয়টি শুনেছি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জানানো হচ্ছে।” এই বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া নিতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement