সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একদিকে গগনচুম্বী টাওয়ারের তরঙ্গ। সেইসঙ্গে চাষের জমিতে যথেচ্ছ ভাবে কীটনাশক। আর এই দুইয়ের জোড়া ফলায় জঙ্গলমহল এলাকায়ও সেভাবে দেখা মিলছে না লক্ষ্মী পেঁচার। তাছাড়া শহর থেকে ব্লক সদরেও যেভাবে ফ্ল্যাট কালচার গ্রাস করছে তাতে কোটর, মাটির বাড়ির মোটা দেওয়াল নেই। ফলে ক্রমশ যেন হারিয়ে লক্ষ্মী পেঁচারা। ফলে উদ্বেগে বনবিভাগ।
পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও দেবাশিস শর্মা বলেন, “এইসব পক্ষীকূল যাতে হারিয়ে না যায় তা দেখা আমাদের দায়িত্ব। যেসব কারণে লক্ষ্মী পেঁচা আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না তা সামনে এনে আমাদের প্রচার চলবে।” এই লক্ষ্মী পেঁচার বিজ্ঞানসম্মত নাম বার্ন আউল। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ শ্রেণিতে এই লক্ষ্মী পেঁচা তিন নম্বরে রয়েছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় কাজ করা পক্ষী বিশারদদের কথায়, এই দুই জেলায় লক্ষ্মী পেঁচার কম দেখা পাওয়ার প্রধান কারণ চাষের জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার। বেশি মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করায় আমন ধানের জমিতে ইঁদুরের দেখা মিলছে না। ফলে লক্ষ্মী পেঁচাও সেখানে নেই। কারণ লক্ষ্মী পেঁচারা মূলত ইঁদুর খায়।
তাঁদের কথায়, “আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে জমিতে সেভাবে কীটনাশক দিতেন না কৃষকরা। ফলে আমন ধানের জমিতে ইঁদুরের উপদ্রব ছিল। সেই ইঁদুর যাতে লক্ষ্মী পেঁচারা খেতে পারে তাই চাষের জমিতে লম্বা বাঁশ পুঁতে দিতেন চাষিরা। এখন এসব অতীত।” বন্যপ্রাণ ও পাখি নিয়ে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় কাজ করা তথা গ্রিন প্ল্যাটুর কর্মকর্তা অনির্বাণ পাত্র বলেন, “চাষের জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে ইঁদুর নেই। তাই এই লক্ষ্মী পেঁচাদের দেখা মিলছে না।” তবে এই পক্ষী বিশারদদের গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, অযোধ্যা পাহাড়ের একাংশে লক্ষ্মী পেঁচা ঘরে পোষা হয়। যা বিধি বহির্ভূত। তবে লক্ষ্মী পেঁচাকে সেভাবে শিকার করা হয় না। যেভাবে চোরা শিকারিদের নজরে থাকে হুতুম পেঁচা।
আজ থেকে এক দশক আগেও সন্ধে হলেই পুরুলিয়ার বনাঞ্চলে চোখে পড়ত লক্ষ্মী পেঁচা। দিনের বেলায় লোকালয়ে চলে আসতো। ঝালদা, বাঘমুন্ডি, আড়শা এলাকায় মাঝে মধ্যেই লক্ষ্মী পেঁচা উদ্ধার হত। কিন্তু আর এই ছবি সেভাবে দেখা মেলে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.