Advertisement
Advertisement
Uttarakhand

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের দায় এড়াতে পারে না প্রশাসনও, তুষারধস নিয়ে মত পরিবেশবিদের

২০১৩ সালের বিপর্যয় থেকেও শিক্ষা নেওয়া হয়নি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

Landslide in Uttarakhand: environmentalists accuss administration of the disastaer |SangbadPratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 7, 2021 3:17 pm
  • Updated:February 7, 2021 5:03 pm  

সুচেতা সেনগুপ্ত: হিমবাহে (Glacier) ফাটল, সেখান থেকে তুষারধস। ২০১৩ সালের স্মৃতি উসকে ফের ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) বিস্তীর্ণ অংশ। ধসের জেরে বাঁধ ভেঙে ভেসে গিয়েছে গ্রাম। নিখোঁজ শতাধিক। আচমকা বিপর্যয়ে দিশেহারা প্রশাসন। উদ্ধারকাজে তড়িঘড়ি ছুটে গিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল, ITBP জওয়ান। ক্ষয়ক্ষতি কতটা, তা এখনও বোঝা যায়নি। তবে বিপদ যে আরও ভয়াবহ হতে চলেছে, তা বেশ টের পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই আগামী নিয়ে তাঁরা বেশি চিন্তিত। পরিবেশবিদ অর্ক চৌধুরীর মতে, গত প্রায় আড়াই দশক ধরে উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি কেউ। এমনকী শিক্ষা নেওয়া হয়নি ২০১৩ সালের বিপর্যয় থেকেও। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

জানা গিয়েছে, চামোলি হিমবাহে ফাটল ধরেছে। কেন ফাটল? ভূবিজ্ঞানের আলোয় কীভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যায়? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে হিমবাহে ফাটল ধরার নাম ক্রিভার্স ফরমেশন (Kriverse formation)। মূলত ভূপৃষ্ঠের একেবারে তলদেশে অতিরিক্ত বরফ জমতে শুরু করলে তার চাপে এমনটা হতে পারে। এবারের শীতের মরশুমে উত্তরাখণ্ড-সহ গোটা উত্তর ভারতেই প্রচুর তুষারপাত হয়েছে, যা চামোলি হিমবাহে ফাটলের নেপথ্যে দায়ী। এছাড়া প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে গত কয়েকদিনে। জোড়া ফলায় হিমবাহ ফেটে যাওয়ায় বরফের খানিকটা উষ্ণ অংশ উপর থেকে গড়িয়ে নিচে নেমেছে। তারপর প্রবল গতি নিয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে। যার জেরে এই জোশীমঠের রেইনি গ্রাম এবং আশেপাশের অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে ভেসে যাওয়া।

Advertisement

[আরও পডুন: কেমন দেখতে মঙ্গল? লালগ্রহের মাটি ছোঁয়ার আগেই ছবি পাঠাল চিনা মঙ্গলযান তিয়ানওয়েন-১]

কিন্তু এই বিপর্যয়ের নেপথ্যে শুধু এই একটাই কারণ নয়। রয়েছে আরেকটি বিশেষ কারণ, যা প্রাকৃতিক নয় মোটেও। পরিবেশবিদ অর্ক চৌধুরীর মতে, মানুষের তৈরি সেই বিপদ। তিনি জানাচ্ছেন, সাধারণত ১৪ হাজার ফুট উপরে থাকে আন্তর্জাতিক তুষাররেখা। তার নিচের দিকে বরফ গলতে পারে। উপরের দিকের বরফ এতটাই কঠিন যে সাধারণত গলে নেমে আসার ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু নিচের দিকের বরফেরও নানা স্তর থাকে। পাহাড়ি পথে গাছ কেটে, পাথর ভেঙে ঘরবাড়ি তৈরি কিংবা সমতল এলাকায় রাস্তা চওড়া করে আরও বেশি গাড়ি চলাচলে অনুমোদন দেওয়া – এসবের জেরে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ে। আর তার প্রভাব পড়ে সমতল থেকে অনেক উচ্চতায় থাকা বরফভূমি বা হিমবাহের উপর। বাড়তে থাকে হিমবাহের তলদেশের উষ্ণতাও। আবার বরফপাতের জেরে একাংশের তাপমাত্রা থাকে অনেকটা কম। ফলে একই তলে তাপমাত্রার এতটা ফারাক হওয়ায় হিমবাহে ফাটল ধরা অস্বাভাবিক নয়। এমনকী ততটা তাপমাত্রা বাড়তে হিমবাহকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে পারে।

[আরও পডুন: ভরসা মাটি-জল, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাংলায় হাজির বিপন্ন গ্রেট নটরা]

২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথে এই বিপর্যয়টিই ঘটেছিল। যার জেরে মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানে ভাসিয়ে নিয়েছিল সব কিছু। পরিবেশবিদ অর্ক চৌধুরী জানাচ্ছেন, এই সময়ে যে গতিতে বরফের স্রোত নিচে নামতে থাকে, তা কয়েক কিলোমিটার। সামনে যা বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা প্রবল তোড়ে ভেসে যায়। বুলডোজার চালিয়ে কিছু উচ্ছেদ করার মতো ঘটনার সঙ্গে এর খানিকটা মিল পাওয়া যায়।

রবিবারের বিপর্যয়ের ফলে সুরক্ষার কারণে ভাগীরথী, অলকানন্দা নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। পরিবেশবিদদের মতে, এটা প্রশাসনের আরেকটি ভুল পদক্ষেপ। অলকানন্দা উচ্চ অক্ষাংশে থাকা নদী। আগেই তার গতিপথ ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কথা ছিল। তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ওই নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দিলে পরবর্তীতে সেখানকার মাটির উপর কতটা চাপ পড়বে, তা জানা নেই কারও। এই অনিশ্চয়তার কারণেই প্রকল্প তৈরি হয়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে বিপর্যয় ঠেকাতে বাঁধ দিলে, তা আগামীতে বিপদ ডেকে আনবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ অর্ক চৌধুরী।বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দূরে সরিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা নিজেরাই এ জাতীয় নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা প্রয়োগ করার জন্যই এত বড় বিপদ বলে মনে করেন পরিবেশবিদদের একটা বড় অংশ। ফলে আজকের বিপর্যয় যতটা প্রাকৃতিক, ততটাই প্রশাসনিক খামখেয়ালিপনার প্রভাব।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement