অভিরূপ দাস: ধোঁয়া বেরনোর নল, হিটারের কয়েল, সেরামিক প্লেট আর ফেলে দেওয়া ঠান্ডা পানীয়র বোতল। তা দিয়েই তৈরি হয়েছে ব্যবহৃত মাস্ক পোড়ানোর পরিবেশবান্ধব (Environment Friendly) যন্ত্র। এই মুহূর্তে যার প্রয়োজন সাংঘাতিক। মাস্কের নোজ ক্লিপ আলগা হয়ে গেছে, কিংবা ফিতে ছিঁড়ে গিয়েছে। পথচলতি অনেকেই তা ছুঁড়ে ফেলছেন রাস্তার ধারে। এসব নষ্ট করতে অভিনব যন্ত্র তৈরি করে ফেলল বাঁশদ্রোণির যুবক শোভন মুখোপাধ্যায়। এমন ব্যবহৃত মাস্ক (Mask) রাস্তায় না ফেলে সেই যন্ত্রে ঢুকিয়ে দিলেই কেল্লাফতে। পুড়ে ছাই হয়ে যাবে অথচ গোটা পদ্ধতি ধোঁয়াহীন। শোভনের তৈরি যন্ত্রের বিশেষত্ব এটাই।
ব্যবহৃত একাধিক মাস্ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রাস্তাঘাটে। এর মধ্যে রয়েছে করোনা রোগীর ব্যবহৃত মাস্কও। না জেনেই যার সংস্পর্শে আসছেন অন্যেরা। চিকিৎসকরা বলছেন, এর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। এসব দেখেই বাঁশদ্রোণির (Basdroni) শোভনের মনে হয়, এটিএম কাউন্টারের মতো যদি রাস্তার মোড়েই থাকত মাস্ক পোড়ানোর মেশিন! অকাজের মাস্ক রাস্তায় না ফেলে তার মধ্যে ঢোকালেই তো মুশকিল আসান। যদি সে যন্ত্র থেকে ধোঁয়াও না বেরোয়! সেই ভাবনা থেকে পরিবেশ বান্ধব যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন দক্ষিণ শহরতলির বাঁশদ্রোণির শোভন মুখোপাধ্যায়। এই যন্ত্র তৈরিতে তাঁর খরচ হয়েছে হাজার দশেক টাকা। শ্রম দিতে হয়েছে মাত্র ৪ দিন।
শোভনের কথায়, “ঘরে ঘরে যে মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহার করা হচ্ছে, যথাযথ পদ্ধতিতে তা নষ্ট না করলে পরিবেশ দূষণ ঘটতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকেই যন্ত্র তৈরির চিন্তাভাবনা।” এই যন্ত্রের দুটি অংশ। মোটা একটি প্লাস্টিকের বাক্স। যার একটা ছোট্ট দরজা রয়েছে। ব্যবহার করা মাস্ক রাস্তায় না ফেলে সেই দরজা দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। বাক্সের ভিতরে রয়েছে হিটারের কয়েল। যন্ত্রের সুইচ অন করলে এই কয়েলটাই গরম হবে। এই যন্ত্র চলে বিদ্যুতে। মাত্র ১৫ ওয়াটের মেশিন। ফলে বিদ্যুৎ পুড়বে অতি সামান্য।
মাস্ক পুড়ে কয়েলের মধ্যে লাগলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই কয়েলের উপর দেওয়া হয়েছে একটি সেরামিক প্লেট। ছোট্ট একটা দরজা খুলে ব্যবহৃত মাস্ক ঢুকিয়ে দিলেই তা পড়বে সেরামিক প্লেটে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মাস্কের ধোঁয়া এরপর একটি পাইপের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। গরম ধোঁয়াকে ঠান্ডা করার ব্যবস্থাও রয়েছে পাইপের ভিতরে। সবশেষে সেই ধোঁয়া গিয়ে বেরবে বোতলের মধ্যে। যার মধ্যে রয়েছে জল। ফলে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা শূন্য। শোভনের কথায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে যদি তা বসানো যায় তবেই এ যন্ত্রের সার্থকতা। আপাতত একটিমাত্র যন্ত্র তৈরি করেছেন তিনি। বরাত এলে আরও বানাতে প্রস্তুত শোভন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.