কৃষ্ণকুমার দাস: রাত আটটা বাজলেই নিভে যাবে কলকাতার বড় পার্কের সব হ্যালোজেন আলো। তিলোত্তমায় বসবাসকারী প্রায় ১০০ প্রজাতির কয়েক লক্ষ পাখির জন্য দ্রুত বদলে ফেলা হচ্ছে মহানগরের সোডিয়াম ভেপারের চড়া আলোর আর্ক-লাইট। রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাইমাস্ট বাতিস্তম্ভেও হ্যালোজেন পালটে নিয়ে আসা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব এলইডি আলো। চড়া লাইট নিভিয়ে দিলেও নিরাপত্তার কারণেই পার্কের চারপাশে নরম আলোর স্পর্শ থাকবে সারারাতই।
শহরের দুই সেরা নাগরিক উদ্যান সিটিজেন এবং ইলিয়টের সমস্ত হ্যালোজেন আলো রাত আটটায় নিভিয়ে দেওয়ার খবর জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র পারিষদ (পার্ক) দেবাশিস কুমার। কেএমডিএ-র শীর্ষ আধিকারিকও এদিন জানান, রাত আটটার পর উত্তরের সুভাষ সরোবর এবং দক্ষিণের রবীন্দ্রসরোবর চত্বরে হ্যালোজেন ও মেটাল ল্যাম্প ধাপে ধাপে নিভিয়ে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে রাত ন’টা বাজতেই নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের সেরা বিনোদন উদ্যান ইকো পার্ক। আলোর দাপটে অসহায় বিনিদ্র রাত কাটানো পক্ষীশ্রেণীর পাশে দাঁড়িয়ে দূষণ রোখার পাশাপাশি বিদ্যুতের খরচ প্রচুর কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুরমন্ত্রী তথা মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতার ফুসফুস ময়দানের ধার ঘেঁষে তৈরি ইলিয়ট ও সিটিজেন পার্কে সারাদিনই হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় করে। দিনের আলোর তীব্রতা উধাও হতে দুই পার্কেই ভিড় বাড়ে। ইদানীং সন্ধ্যায় অফিস ফেরত যুগলের ভিড় একটু বেশি সংখ্যায় ইলিয়ট পার্কে জমিয়ে বসছেন। বস্তুত এই কারণে পার্কে আসা ভ্রমণার্থীদের জন্যই কোটি কোটি টাকা খরচ করে সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি প্রচুর আলো দিয়ে সাজিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু বছর কয়েক ধরে এই আলো সূর্যাস্ত থেকে পরদিন সূর্যোদয় পর্যন্ত একই তীব্রতায় জ্বলে। কিন্তু এর ফলে একদিকে যেমন বাতাসে দূষণের তীব্রতা বাড়ছে তেমনই প্রতিটি পার্কের জন্য প্রতি মাসে পুরসভাকে কয়েক লক্ষ টাকার বিদ্যুতের বিল দিতে হচ্ছে। পরিবেশবিদ ও পক্ষীপ্রেমীরা মাস কয়েক আগেই মেয়রকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, বড় পার্কের চড়া আলোর দাপটে পাশের গাছে বসবাসকারী হাজার পাখিদের রাতে ঘুম আসে না। পিজি হাসপাতাল বা নিউমার্কেট লাগোয়া এলাকার ময়দানের গাছগুলিতে চড়া আলোর জন্য রাতে বিনিদ্র পাখিদের ডানা ঝাপটানোর পাশাপাশি করুণ আর্তনাদ ভেসে আসে।
কেএমডিএ-র আধিকারিক স্বীকার করেছেন, আলোর তীব্রতার জন্য ইদানীং বহু বিরল প্রজাতির পাখি আর আগের মতো রবীন্দ্র সরোবরে আসছে না। একসময় কয়েকশো প্রজাতির পাখি এসে ভিড় করত ঢাকুরিয়া লেকের চারপাশের সমস্ত গাছে। কিন্তু গত ক’বছরে সারারাত চড়া আলোর তীব্রতা সরোবরের সবুজ বনানীর অলংকার পাখিদের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। বস্তুত এই কারণেই কেএমডিএ-র চেয়ারম্যান তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, রাত আটটার পর ধাপে ধাপে পার্কের চড়া আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, শহরের বাসিন্দাদের একাংশ এখন ভোরের পরিবর্তে সন্ধ্যায় রবীন্দ্র সরোবরে নিয়মিত হাঁটতে আসেন। রাত আটটা পর্যন্ত তাঁদের পার্ক ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। তাই তাঁরা বেরিয়ে গেলেই পর্যায়ক্রমে চড়া আলো নিভিয়ে দেবে কেএমডিএ।
তবে নিরাপত্তার কারণে, শহরের সমস্ত পার্কের ভিতরেই ‘নরম’ আলো যেমন জ্বলবে তেমনই নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা ও নজরদারি বাড়ানো হবে। এভাবেই আলো নিভিয়ে দিয়ে ইকো পার্কে একদিকে যেমন কয়েক লক্ষ টাকা বিদ্যুতের বিল কমানো গেছে তেমনই পাখিদের নিরুপদ্রব রাত্রি উপহার দিতে পেরেছে পরিচালন সংস্থা হিডকো।
ছবি: অরিজিৎ সাহা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.