রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: বট, পাকুড়, অশ্বত্থ আর ডুমুর ফেরাতে অভিনব উদ্যোগ নিল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। গাছের উপর এই সব চারাগাছ লাগাচ্ছেন বনকর্মীরা। ইতিমধ্যেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের জলদাপাড়া পূর্ব, জলদাপাড়া পশ্চিম, জলদাপাড়া উত্তর, চিলাপাতা ও কোদালবস্তি রেঞ্জে বিভিন্ন গাছের উপর বট, পাকুড়, অশ্বত্থ ও ডুমুরের ২০০ চারাগাছ লাগানো হয়েছে। এই সব চারাগাছের জিপিএস (গ্লোবাল পজেশনিং সিস্টেম) লোকেশন নিয়ে নজরদারি রাখা হচ্ছে। প্রতিদিন এই সব চারাগাছের কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে তাও লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। এর ফলে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান আরও সবুজ, আরও সতেজ হয়ে উঠবে বলে দাবি করেছে বনদপ্তর।
কিন্তু চারাগাছতো মাটিতে লাগানোরই নিয়ম। গাছের উপর আবার গাছ লাগানোর এই উদ্যোগ কেন? জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন পরিবেশের অত্যন্ত উপকারী এই সব গাছের পাতা ও ডালপালা তৃণভোজী প্রাণীদের পছন্দের খাবার। আর হাতিরাতো এই সব গাছের ডালপালা ও পাতা পেলে আল্লাদে আটখানা হয়ে যায়। যে কারণে মাটি থেকে এই সব গাছ বড় করা জঙ্গলের ভেতর প্রায় সম্ভব হয় না। সেই কারণে জঙ্গলের তৃণভোজীদের নাগালের বাইরে রাখতেই গাছের উপর এই সব গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে বনদপ্তর।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সহায়ক নবজিৎ দে বলেন, “জঙ্গলে যেসব বড় বড় বট পাকুড়ের গাছ রয়েছে সেগুলো দেখা গেছে অন্যকোন গাছের উপর জন্মে ধীরে ধীরে বড় হয় আশ্রয় দেওয়া সেই গাছের থেকেও বড় হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক এই নিয়মকেই আমরা কাজে লাগিয়ে বনাঞ্চলে এই সব গাছের সংখ্যা বাড়াতে চাইছি। এই সব বট পাকুড়ের ছোট চারাগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে শেকড় মাটিতে পৌঁছে যাবে।”
প্রকৃতির আশ্চর্য সব নিয়মকে কাজে লাগিয়েই বনদপ্তর বনাঞ্চলে এই সব প্লান্ট ম্যানেজমেন্ট করছে। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘টপ ট্রি প্লান্টেশন’। এক বনকর্তা জানান, বট অশ্বত্থের বীজ সরাসরি মাটিতে পুঁতলে তাথেকে চারাগাছ বের হয় না। আসলে বট অশ্বত্থের ফল পাখিরা খায়। তার পর পাখিদের পৌষ্টিকতন্ত্র বা পাকস্থলিতে বিশেষ এক ধরনের এসিডের সংযোগে আসলে এই সব বীজেদের অঙ্কুরোদগমের ক্ষমতা জন্মায়। তার পর পাখিরা মলত্যাগ করলে সেই বীজ থেকে চারাগাছ তৈরি হয়। সেই কারণে বট গাছ সাধারণত ছাদে, কার্ণিশে যেখানে পাখিরা মল ত্যাগ করে সেখানে জন্ম নিতে দেখা যায়।
কৃত্রিমভাবে পাখির পেটের সেই প্রাকৃতিক নিয়মকে কাজে লাগিয়ে নার্সারিতে বট, অশ্বত্থ, পাকুড় ও ডুমুরের চারা তৈরি করেছে বনদপ্তর। আর সেই সব চারাগাছের গোড়ায় থাকা সার মাটি সহ চটের বস্তায় বেঁধে তা গাছের উপর চটের রশি দিয়ে বেঁধে আটকে দেওয়া হয়েছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও পারভিন কাশোয়ান বলেন, “পরিবেশ থেকে বট পাকুড় অশ্বত্থ ও ডুমুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। জায়গার অপ্রতুলতার জন্য মানুষ আর এই সব উপকারী গাছ রাখতে চাইছেন না। আমরা বনাঞ্চলে এই সব গাছের সংখ্যা বাড়াতে চাইছি। সেই কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.