সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পৃথিবীকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন দশকে পা রেখেছেন বিশ্ববাসী। তার মধ্যে অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া। সেই লক্ষ্যে কাজ করতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে নতুন রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন ব্রিটেনের কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁরা দেখেছেন, হাইড্রোজেন গ্যাস তুলনায় বেশি পরিবেশবান্ধব। এতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। তাই অন্যান্য জ্বালানির সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করলে, সামগ্রিকভাবে পরিবেশ দূষণ কমতে পারে। গবেষণায় এমন সাফল্যের পর এখন হাইড্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
এই প্রথম ব্রিটেনে হাইড্রোজেন গ্যাস নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণা চলল। কিল বিশ্ববিদ্যালয়কে এই গবেষণায় বেছে নেওয়ার কারণ, এখানের নিজস্ব গ্যাস সিস্টেম রয়েছে। যাতে পরীক্ষা করা সুবিধা। এমনিতে হাইড্রোজেন গ্যাস পাওয়া যায় জল থেকে। উচ্চ উষ্ণতায় জলের রাসায়নিক বিশ্লেষণের ফলে আলাদা করে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস পাওয়া যায়। কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেও সেভাবেই যন্ত্রপাতির মাধ্যমে জলে রাসায়নিক বিশ্লেষণ থেকে সংগ্রহ করা হয় হাইড্রোজেন গ্যাস। এরপর তার সঙ্গে রান্নার গ্যাস মিশিয়ে কাজে লাগানো হয়। দেখা গিয়েছে, সেই ধোঁয়ায় নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণ অনেকটা কম, ফলে দূষণও কম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাইড্রোজেন গ্যাসের ২০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। এই তথ্য সামনে আসার পর অনেকেই বলছেন, এই গ্যাস দূষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করলেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই। কারণ, মহার্ঘ্য হাইড্রোজেন গ্যাস। তবে এই ভাবনা এবং আবিষ্কারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
এই পরীক্ষায় সাফল্য লাভের পর বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহারের উপযোগিতা প্রচুর। যা পৃথিবীকে দূষণের বিষ থেকে অনেকখানি মুক্ত করতে সক্ষম। মাত্র ২০ শতাংশ হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ যদি দৈনন্দিন সমস্ত কাজে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কার্বন নিঃসরণ কমতে পারে ৬ মিলিয়ন টন। যার সঙ্গে তুলনীয় রাস্তাঘাটে চলনশীল অন্তত আড়াই মিলিয়ন গাড়ির দূষণ। বিজ্ঞানীরা আরও জানাচ্ছেন, সম্পূর্ণ দূষণমুক্তির জন্য হাওয়া থেকে তৈরি বিদ্যুতের সঙ্গে হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহার। কিন্তু ব্যবহৃত হাইড্রোজেন গ্যাসের পরিমাণ কেন ২০ শতাংশেই বেঁধে দেওয়া হল? এর উত্তরে জানা যাচ্ছে, এর বেশি পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহৃত হলে যার মাধ্যমে গ্যাসটি বাহিত হচ্ছে, অর্থাৎ গ্যাস পাইপটি ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
এখন কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নয়া আবিষ্কারকে যদি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হয়, তাহলে সরকারি সাহায্য অবশ্যই প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষুণি না হোক, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার এ বিষয়ে কোনও সদর্থক উদ্যোগ নিক, এমনটাই চান তাঁরা। আসলে, লড়াই তো সকলের একটাই। ক্রমবর্ধমান দূষণ রুখে দিয়ে পৃথিবীকে সুস্থ রাখা। কাজেই ইংল্যান্ড হোক কিংবা ইথিওপিয়া, প্রথম থেকে তৃতীয় বিশ্ব সকলকে একযোগে কাজে শামিল হতে হবে। আর সাধারণের স্তরে হাইড্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার সেই লড়াইকে সহজ করে দিতে পারে বলেই আশা তাঁদের। মহার্ঘ্য এই গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যদি তাকে সাধারণের ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা গেলেই মুশকিল আসান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.