রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: ‘হিসপিড হেয়ার’। বিরল প্রজাতির ওই বুনো খরগোশ জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের সম্পদ। কিন্তু গত সপ্তাহে জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের পর সেই খরগোশের দেখা না মিলতেই বন দপ্তরের কর্তাদের কপালে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ঘাস জঙ্গলের আগুনে ওই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী একেবারেই উধাও হয়েছে?
বৃহস্পতিবার তৃণভোজী বন্যপ্রাণ গণনার প্রথম দিনে একটিও ‘হিসপিড হেয়ার’ নজরে পড়েনি। আর তাতেই শঙ্কা বেড়েছে। যদিও বনকর্তাদের আশা, আরও কয়েকদিন গণনা চলবে। তখন হয়ত দেখা মিলতে পারে ওই তৃণভোজীদের। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “অগ্নিকাণ্ডে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের তৃণভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানেই হিসপিড হেয়ারের বাসস্থান। তবে প্রথমদিন দেখা না মিললেও আশা করছি প্রাণীটি গণনায় উঠে আসবে।”
জানা গিয়েছে, প্রাণীটি এতটাই বিরল যে ভারতের একমাত্র অসম ও জলদাপাড়ার ঘাস জঙ্গলে দেখা মেলে। প্রাণীটি স্থানীয় মহলে ‘অসম র্যাবিট’ নামেও পরিচিত। আইইউসিএনের রেড ডাটা বুকে ‘লুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণ‘-এর তালিকায় রয়েছে এটি। একসময় হিমালয়ের দক্ষিণদিকের পাদদেশে তৃণভূমিতে এদের দেখা যেত। ভোরবেলা ও গোধূলির সময় এরা লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে বের হয়। সম্প্রতি জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের জঙ্গলে লুকানো ক্যামেরায় হিসপিড হেয়ারের ছবি ধরা পড়ে। এই প্রথম প্রাণীটির ছবি ফ্রেমবন্দি হয়। এর আগে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে হিসপিড হেয়ার থাকার রেকর্ড ছিল। কিন্তু ছবি ছিল না। এবার বনদপ্তরের সৌজন্যে সেই ছবি মিলতেই খুশির আবহ তৈরি হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সাল থেকে জলদাপাড়ায় হিসপিড হেয়ার দেখা যায়নি। জাতীয় উদ্যানের ভিতরে তোর্সা নদীর চরে ঘাস জঙ্গলে প্রাণীটি একসময় যে ছিল, সেই রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর তৃণভূমিতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে আর দেখা মেলেনি। সম্প্রতি জঙ্গলে আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে তোর্সার চরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। বনকর্তাদের দাবি, ওই কারণে ২০১৯ সালে হিসপিড হেয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এবার ফের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হিসপিড হেয়ারের মতো ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণের ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা বেড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে দু’দশক আগে যে বন্যপ্রাণের খোঁজ মিলেছিল, আগুন কি তাকে পুরোপুরি কেড়ে নিল? নাকি অন্য কোথাও আশ্রয় নিয়ে ওরা টিকে রয়েছে? কয়েকদিনের গণনায় সেই উত্তরের খোঁজার চেষ্টা করবেন বনকর্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.