জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: এক রাতেই গাছের পাতার সবুজ প্রায় উধাও। বদলে সাদা সাদা অজস্র ছোপ। বনগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলে সোমবার সন্ধে থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই বিভিন্ন গাছের এই চেহারা দেখে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। অনেকেই চিন্তিত এই ভেবে যে, গাছেও কি বাসা বাঁধল করোনা ভাইরাসের জীবাণু, যার জেরে পাতার এই হাল? এ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়তেই আসরে নামে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চ। তাঁরা সব দেখে জানান, গাছের এই পরিবর্তনের সঙ্গে নোভেল করোনা ভাইরাসের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি এক ধরনের ক্ষতিকারক পতঙ্গের উপদ্রব।
সোমবার সন্ধে থেকে বনগাঁ এবং নদিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নারকেল এবং অন্যান্য গাছের পাতাগুলিতে সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। কোনও কোনও পাতা প্রায় বিবর্ণ হয়ে যায়। যা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষজন। গাছের পাতা সাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয় মোটেও। হয়ত এই দৃশ্য পরিচিতই। কিন্তু সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে বিষয়টি অন্য চোখে দেখছেন স্থানীয়রা। করোনা ভাইরাস যেভাবে দেশজুড়ে থাবা বসাচ্ছে এবং উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তাতে স্থানীয় মানুষজন গাছের পাতার এমন রূপ বদলের নেপথ্যে করোনাকে দায়ী কি না, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বারবার আশ্বস্ত করেছেন যে এই জীবাণু পোষ্য, পতঙ্গ কিংবা উদ্ভিদের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় না, শুধুমাত্র মানবশরীর থেকেই তা ছড়ায়। তা সত্ত্বেও আতঙ্কের আবহে কাজ করে না কোনও যুক্তিবোধ। স্মরণে থাকে না কোনও তথ্যও। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই করোনা কাঁটায় ত্রস্ত হয়ে ওঠেন। নারকেল বা তালগাছের প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়ে অনেকের।
পরিস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। সবটা খতিয়ে দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন আসল ব্যাপারটা। মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার জানান, বিষয়টি একেবারেই করোনা প্রভাবিত নয়। এর সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কণামাত্র সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি বিষধর পতঙ্গের উপদ্রব। একধরনের সাদা মাছি আছে – বৈজ্ঞানিক নাম অলিওরোডিকাস রুগিওপারকুলেটাস। এরা নারকেল বা তাল অর্থাৎ তেল উৎপাদনকারী গাছে বেশি বাসা বাঁধে। এই মাছির মুখ থেকে সবসময়েই মধুর মতো উৎসেচক নিঃসৃত হয়, যা গাছের পাতার উপর জমে যায়। ওই উৎসেচকের পর একধরনের ছত্রাক জন্মায়। এই ছত্রাক আবার পাতার ক্লোরোফিলগুলি ধ্বংস করে। ফলে সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে গাছের প্রভূত ক্ষতি হয়।
এক্ষেত্রেও তাইই হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যরা। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহজ করে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝান। ধীরে ধীরে সকলে ভুল ধারণা ভেঙে বেরিয়ে আসেন।
শুনুন বিশেষজ্ঞের মতামত:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.