সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজ্য বনদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বৃহৎ আকারে এই প্রথম পুরুলিয়ায় (Purulia) ‘ওয়াটার বার্ড’ বা জলজ পাখি গণনা হবে। ‘অ্যানুয়াল কাউন্ট অফ ওয়াটার বার্ডস-২০২৪’ নাম দিয়ে এই সমীক্ষার কাজ শুরু হবে চলতি মাসের ১৮ জানুয়ারি থেকে। চলবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।
পুরুলিয়া বনবিভাগের (Forest Department) এই কাজে ইচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, প্রকৃতিপ্রেমী, পরিবেশবিদ, পক্ষী নিরীক্ষণ করা মানুষজন এই কাজে অংশ নিতে পারেন বলে পুরুলিয়া ডিভিশন সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে। আর তার ভিত্তিতেই পুরুলিয়া বন বিভাগকে মেল করছে বিভিন্ন সংস্থা। সবমিলিয়ে পাখি গণনা (Counting) ঘিরে পুরুলিয়া বন বিভাগে চলছে জোর কদমে প্রস্তুতি।
পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও (DFO) কার্তিকায়েন এম বলেন, “এটি মূলত ওয়াটার বার্ড গণনা। মুরগমা, টুরগা-সহ একাধিক জলাধারে এই গণনা হবে। তার পর তার ছবি সম্বলিত তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। গণনা শেষে ফলাফল কী আসছে তার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব ‘বার্ডস অফ পুরুলিয়া’ বই প্রকাশ করব কিনা।” ২০২১ সাল থেকে রাজ্য বনদপ্তরের বন্যপ্রাণ শাখা এই কাজ শুরু করে সমগ্র রাজ্য জুড়ে। যা এবারই পুরুলিয়ায় বৃহৎ আকারে হচ্ছে।
বনবিভাগের এই উদ্যোগকে বাহবা জানিয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় পাখি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা-সহ পক্ষীপ্রেমীরা। এই দুই জেলায় পাখি নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার কর্ণধার অনির্বাণ পাত্র বলেন, “এটা সত্যি খুব ভালো উদ্যোগ। কোনও প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া পরিবেশের অনেক কিছু ঘটনার ওপর নির্ভর করে। শীতকালে আসা জলের পরিযায়ী পাখিরা জলজ বাস্তুতন্ত্র-র ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু পরিযায়ী পাখি না এলে বড় জলাভূমি গুলিতে মাছের সংখ্যাতেও পরোক্ষ ভাবে প্রভাব পড়বে। ফি বছর যেন এই কার্যক্রম করা হয়। দক্ষিণ বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুরে প্রত্যেক বছর ব্যাপক আকারে রুফোস টেলড লার্ক আসে। ২০১৯ সাল নাগাদ এদের সংখ্যা হঠাৎ করে কমে যায়। কারণ হিসবে পাওয়া যায় যে শীতকালে নদীর পাড়ে রং করা হয়েছিল। তারপর থেকে বছরের অন্যান্য সময়ে রঙ করা হয়। তাই এই পাখি সুমারির গুরুত্ব পরিবেশ রক্ষায় ভীষণ জরুরি। “
পাখির ছবি তোলার কাজে যুক্ত তথা পক্ষীপ্রেমী পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা বরুণ রাজগড়িয়া বলেন, “সাধারণ মানুষের এটা খুব জানা দরকার পুরুলিয়ায় যে সকল পরিযায়ী পাখি আসে তার মধ্যে কোনগুলো এদেশের। কোন গুলো বিদেশের । সেই সঙ্গে এই জেলায় যে জলজ পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে তা ঠিক কতটা তা বিস্তারিত জানা যাবে।”
শহর পুরুলিয়ার প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবর সাহেব বাঁধে একসময় প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই সংখ্যাটা একেবারেই কমে এসেছে। গত ৩-৪ বছরে জলাশয়ে আর পরিযায়ী দেখা যায় না। আর এবার স্থায়ী পাখিদেরও দেখা মিলছে না।তাই এই জলাশয়কে ঘিরে যে বার্ড ট্যুরিজমের সম্ভাবনা ছিল তা মার খাচ্ছে। তবে ভালো খবর এটাই সাহেব বাঁধ থেকে পরিযায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও জেলার অন্যান্য জলাশয়ে পরিযায়ীদের দেখা মিলছে যথেষ্টই। এই জলজ পাখিদেরই এবার গণনা করবে বনদপ্তর। বন কর্মীদের পাশাপাশি এই কাজে ইচ্ছুক সংস্থা প্রকৃতি ও পক্ষী প্রেমীদেরও কাজে লাগাবে পুরুলিয়া বনবিভাগ।
পুরুলিয়ায় জলজ পক্ষীকূলের তালিকা –
👉 সরাল ও বালি হাঁস – শীত পড়লেই বহু জলাশয়ে দেখা মেলে। তবে কয়েকটি জলাশয়ে অন্যান্য সময়ও থাকে।
👉 পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধে রেসিডেন্সিয়াল পাখি হয়ে গিয়েছিল পিনটেল, কমনটেল, পারপেল মুহরান, ওয়াটার কক। কিন্তু বর্তমানে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে জেলার অন্যান্য জলাশয়ে পিনটেল, কমনটেল দেখা মিলছে।
👉উইন্টার মাইগ্র্যাটরি বলে পরিচিত গ্রে হিরণ, পারপেল হিরণ, লিটিল গামবে, পন্ড হিরণ, গ্রিন সান, গ্যাং আনয় আগে পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধে ফি বছর শীতে দেখা যেত।
👉ন্যাশনাল সামার মাইগ্র্যাটরি ইন্ডিয়ান সেগ, ইন্ডিয়ান মহুরান, গ্যাডওয়াল
পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধে দেখা না মিললেও জেলার অন্যান্য জলাশয়ে দেখা যায়।
👉 ঝালদার কুকি জলাধারে দেখা যায় বার হেডেড গুজ। তবে বর্তমানে সংখ্যাটা কমে আসছে।
👉লাদাখ থেকে আজও আসে বড় পানকৌড়ি। প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় খঞ্জনা।
👉 আমেরিকা থেকে আসে গোল্ডেন প্লভার। এই পাখির সংখ্যা বেশ ভালো। দেখা যায় টার্ন, ভুটি হাঁস। তবে কমে যাচ্ছে চোখাচখি।
( তথ্য ও সূত্র: পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় কাজ করা গ্রিন প্লাটু )
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.