সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাছ কাটা হলে বিধানসভায় শোকসভা, হয়ত শুধু নাগরিক কবিয়ালের গানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে প্রতিদিন টন টন বরফের মৃত্যুতে আইসল্যান্ডবাসী যা করলেন, তা জানলে হয়ত কবির অনুভূতিতে ধরা দিত অন্য দিগন্ত।
অসুখের নাম -বিশ্ব উষ্ণায়ন। লক্ষণ, মেরুপ্রদেশের বরফ গলন, সমুদ্রের তলদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ওজোন স্তর পাতলা হওয়া-সহ পরিবেশের একাধিক ক্ষতি। আর এই সবকিছুর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে কেউ কবিতা লিখছেন, কেউ বা হারিয়ে যাওয়া অচেনাদের উদ্দেশে লিখছেন চিঠি। এভাবেই তাঁরা বিশ্বকে বার্তা দিতে চাইছেন, পরিবেশের প্রতিটি অংশ মানবজীবনের সঙ্গে জড়িত। তাই প্রিয়জনের অনুপস্থিতি যেমন বেদনাবোধ জাগায়, বরফের গলনও তেমনই বিয়োগান্তক।
হিমবাহ গলছে, বরফের স্তরে জেগে উঠছে মৃত নদীর শরীর। আইসল্যান্ডের ওকজোকাল হিমবাহের এই পরিণতি বড় বিষণ্ণ করে তুলেছে স্থানীয় ভূতত্ববিদ ওদ্দুর সিগারসনকে। তিনি জানেন, আইসল্যান্ডের প্রথম হিমাবহ, যা মৃত্যুপথযাত্রী। তিনিই তুষার সমাধির জন্য শোকসভা আয়োজন করেছেন। সেখানে তিনি সংবাদমাধ্যম মারফৎ বিশ্ববাসীকে এবিষয়ে সচেতন করতে একটি ডেথ সার্টিফিকেটও নিয়ে আসেন। সেই সভাতেই কবিতা, চিঠি, ফুল নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন শতাধিক পরিবেশপ্রেমী। ২ঘণ্টা ধরে চলে শোকজ্ঞাপন। ছোটরাও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে হিমবাহ, আগ্নেয়গিরি বাঁচানোর আবেদন করতে থাকে। একজন বলছেন, ‘আমি জানি আমার নাতি একদিন জিজ্ঞেস করবে, আজকের দিনগুলো কেমন ছিল, আর কেন আমরা এই পরিবেশ বাঁচিয়ে রাখতে কিছু করলাম না।’ কারও হাতে ধরা পোস্টারে লেখা – ‘এটা একটা স্মৃতিফলক, যা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, কী আমরা করছি আর ভবিষ্যতে কী হবে।’
সিগারসন বলছেন, ‘হিমবাহের এই সাংকেতিক মৃত্যু অত্যন্ত গুরুতর ইঙ্গিতবাহী।এভাবে চলতে থাকলে ২০০ বছরের মধ্যেই সমস্ত হিমবাহ গলে যাবে। আমাদের সচেতন হয়ে পদক্ষেপ করা উচিৎ।’ আইসল্যান্ডের বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, দুজনেই সিগারসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কাটিন জ্যাকবস্টোডির বলছেন, আমাদের নষ্ট করার মতো সময় আর নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক ক্ষতির মুখে আমাদের পড়তে হবে।’ তিনি এও জানান, এবার উষ্ণায়ন রোধে কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার রিকজাভিক সফরে যাচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল। তাঁর সঙ্গে এনিয়ে আলোচনার পর মেরুদেশগুলি যৌথভাবে এনিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে। পরিবেশ বাঁচাতে মর্কেল, জ্যাকবস্টোডিরা হয়ত হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু এই কবিতায়, চিঠিতে হিমবাহের স্মরণানুষ্ঠানে কি সত্যিই কেউ সচেতন হবেন? সে প্রশ্ন রেখে গেল গলে যাওয়া বরফের চাঁই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.