সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হাতি তাড়াতে আর হুলা পার্টি নয়। ঝাড়গ্রামের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে হাতি মোকাবিলায় বনকর্মীদের হাতে এবার ‘গজ শস্ত্র’! মনে প্রশ্ন জাগছে তো, সেটা আবার কী? গুলি-বারুদ ছাড়াই পরিবেশবান্ধব আগ্নেয়াস্ত্র। কার্বাইডে জল মিশিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে কৃত্রিম বন্দুক বানিয়ে কার্বাইড ও জলের মিশ্রণে উৎপাদিত গ্যাসকে ট্রিগারের সাহায্যে বে করে দেয়। যে তীব্র আওয়াজে শুধু কান ঝালাপালা নয়, রীতিমতো কম্পন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেইসঙ্গে আগুনের ঝলকানিও। আর এসব দেখে পিছু হঠতে পারে হাতির দল। কানফাটা আওয়াজে বিরক্তি হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে। হাতি তাড়াতে আগুনের ব্যবহার না করে এমনই অভিনব উদ্ভাবনী ‘গজ শস্ত্র’ এনেছে পুরুলিয়া (Purulia) বনবিভাগ।
শুক্রবার বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলে এডিএফও (ADFO) সায়নী নন্দীর উপস্থিতিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ‘গজ শস্ত্র’-র প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই তা ব্যবহার করতে শুরু করে বাঘমুন্ডি (Bagmundi)ও ঝালদা বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। আপাতত পুরুলিয়ার এই দুই বনাঞ্চলে হাতি তাড়াতে বনকর্মীদের নিয়ে গঠিত কুইক রেসপন্স টিম এই ‘গজ শস্ত্র’ ব্যবহার করছে। আগুনের ব্যবহার ঠেকিয়ে হাতি তাড়াতে সহজ বিজ্ঞানকেই অবলম্বন করেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। যার তারিফ করেছে অরণ্য ভবন। রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “ঝাড়গ্রামের ঘটনায় আমাদের মন ভালো নেই। ডিএফওদের বলা হয়েছিল, হাতি তাড়াতে আগুনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। হুলা ছাড়া বিকল্প পথে কিভাবে অতি সহজে হাতির দলকে লোকালয় থেকে সরানো যায়, তা দেখতে।”
২০১৮ সালেই একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) নির্দেশ দিয়েছিলো হাতি তাড়াতে হুলা ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সুপ্রিম নির্দেশের পরেও হাতি তাড়াতে আগুনের ব্যবহার ঠেকানো যায়নি। শুধু বাংলা নয়, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাতেও এখন হাতি তাড়াতে পুরোদমে হুলা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুরুলিয়া বনবিভাগের এই ‘গজ শস্ত্র’ হাতি তাড়াতে নয়া দিশা দেখাতে পারে এমনই বলছেন অরণ্য ভবনের কর্তারা। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও (DFO) অঞ্জন গুহ বলেন, “বনমন্ত্রী আমাদের বারে বারে বলেছেন হাতি-মানুষ সংঘাত ঠেকাতেই হবে। তাই এই ‘গজ শস্ত্র’ প্রকল্প। যা তৈরিতে সে অর্থে কোন খরচই নেই। বুনো হাতি যেহেতু আগুনকে ভয় পায়, পূর্ণবয়স্ক হাতিরা তীব্র শব্দে বিরক্ত হয়। হস্তী শাবকরা ওই শব্দে ভয় পেয়ে পিছু হঠে। তাই এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই আমরা এই সহজ বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছি।”
বনদপ্তর (Forest Department) সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতি তাড়াতে গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে যে র্যাপিড রেসপন্স টিম রয়েছে তাদেরকেও প্রশিক্ষণ দেবে পুরুলিয়া বন বিভাগ। হুলা পার্টি সদস্যরা যেভাবে আগুনের মশাল হাতির একেবারে কাছে গিয়ে তাদের খেদানোর চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে তা হবে না। দূর থেকেই এই কাজ করতে পারবেন বনকর্মী, যৌথ বন পরিচালন কমিটি থেকে গ্রামবাসীরা। ফলে হাতি তাড়াতে কোনও ঝুঁকি থাকবে না। বাঘমুন্ডি ও ঝালদা (Jhalda) বনাঞ্চলের আধিকারিক যথাক্রমে শাহনাজ ফারুক আহমেদ ও অপূর্ব মাহান্তি বলেন, “ইতিমধ্যেই এই ‘গজ শস্ত্র’ প্রয়োগ করে আমরা সুফল পেতে শুরু করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.