সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সবার জন্য মহাকাশ। দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় আনা কিংবা মহাকাশে ভেসে বেড়ানোর স্বপ্নও আর অবাস্তব রইল না বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কাছে। এবার আর পাঁচজনের মতো বিশেষভাবে সক্ষমরাও মহাকাশে পাড়ি দিতে পারবেন। এমনই সুযোগ করে দিচ্ছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)। বিশ্বে প্রথম শারীরিকভাবে দুর্বল কোনও ব্যক্তিকে মহাকাশচারী হিসাবে অভিযানে পাঠানো হবে। দুর্বল পা, শক্তিহীন হাত নিয়েই মহাকাশে যাবেন বিশ্বের প্রথম বিশেষভাবে সক্ষম কোনও নভোশ্চর।
ESA প্রধান জোসেফ অ্যাসবাচারের কথায়, “বিশেষভাবে সক্ষম বা শারীরিকভাবে দুর্বল এমন অনেক ব্যক্তি মহাকাশে যেতে ইচ্ছুক। তাঁদের সেই যোগ্যতাও রয়েছে। অনেকদিন ধরেই ESA বিশেষভাবে সক্ষম নভোশ্চরের খোঁজে ছিল। এরপর একটি শিবিরে প্রায় ২২ হাজার ইচ্ছুক বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি মহাকাশ অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে থেকে ২২ জন সদস্যকে বাছাই করে নেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের পর এঁদের মধ্য থেকেই একজনকে পাঠানো হবে মহাকাশে।” অনন্ত মহাকাশে একজন শারীরিকভাবে দুর্বল বা ‘দিব্যাঙ্গ’ ব্যক্তিকে নভোশ্চর হিসাবে পাঠানোর অভিযান যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জেরও হবে।
তবে অস্ট্রিয়ার নাগরিক জোসেফ সবচেয়ে খুশি এবার থেকে মহাকাশে যাওয়ার পথ সকলের জন্য খোলা হচ্ছে বলে। তিনি আরও বলেন, “সুস্থ মানুষকে মহাকাশে পাঠানো অনেকবার হয়েছে। কিন্তু বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিকে পাঠানোর ঘটনা এই প্রথম ঘটবে। শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিকে নভশ্চর হিসাবে গড়ে তুলে মহাকাশে পাঠানোর অভিযানের প্রস্তুতি আমরা শীঘ্রই শুরু করব। এটা যেমন আনন্দের তেমনই আমি ESA’র জন্য গর্বিত। মহাকাশ যে সকলের জন্য সেটা এই সংস্থা প্রথম চিন্তাভাবনা করেছে।”
মহাকাশ অভিযান সংক্রান্ত সমস্ত কর্মকাণ্ডে বিশ্বে চিরকালই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। এদের আরিয়ান রকেট এক সময় বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এমনকী আমাজন (Amazon) কর্তা জেফ বেজোসের সংস্থা ব্লু অরিজিন ও এলন মাস্কের স্পেস এক্সের (Space X) সঙ্গে জোর টক্কর দিত। অন্যদিকে, আগামী মাসেই নিজের রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন বেজোস। জানা গিয়েছে, আগামী ২০ জুলাই তিনি ‘নিউ শেপার্ড বুস্টার’-এর সাহায্যে মহাকাশে যাবেন। বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ যাত্রাকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়েছেন এই ধনকুবের। শোনা যাচ্ছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করলে মহাকাশে তাঁর সফরসঙ্গীও হওয়া যাবে।
তবে মহাকাশ অভিযান নিয়ে ইএসএ-র সঙ্গে আমেরিকার যে জোর প্রতিযোগিতা চলে, তা অস্বীকার করেননি ইএসএ প্রধান। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ বাজেট ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির। সাত বিলিয়ন ইউরো বাজেট নিয়েও সংস্থাকে আরও উন্নত করার স্বপ্ন বুনছেন জোসেফ। আমাজন-কর্তা, টেক জায়েন্ট এলন মাস্কদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে জোসেফ বলেন, “মহাকাশ গবেষণা ভীষণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আমরা এখন নতুন কিছু না করলে পিছিয়ে পড়ব।” সেই কারণেই হয়তো এবার শারীরিকভাবে দুর্বলদের মহাকাশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দুনিয়াকে চমকে দেওয়ার স্বপ্নে বুঁদ ইএসএ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.