Advertisement
Advertisement
Purulia

ভিলেন দূষণ, পরিযায়ীর পর সাহেব বাঁধ থেকে মুখ ফেরাল স্থানীয় পাখিরাও

সাহেব বাঁধকে গ্রাস করেছে দূষণ।

Due to pollution, birds have decreased in Saheb Bandh in Purulia | Sangbad Pratidin

সাহেব বাঁধের দূষণে মুখ ফিরিয়েছে পাখিরা

Published by: Sayani Sen
  • Posted:January 8, 2024 5:32 pm
  • Updated:January 8, 2024 5:33 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আর ডানা ঝাপটাচ্ছে না পারপেল হিরণ, গ্রিন সান, গ্যাড ওয়াল। এমনকি মুখ ফেরাচ্ছে স্থায়ীভাবে বসবাস করা ওয়াটার কক, কমন টেল, পিনটেল, পারপেল মুহরানের মতো পক্ষীকূলও। শহর পুরুলিয়ার প্রস্তাবিত জাতীয় সরোবর সাহেব বাঁধকে যে গ্রাস করেছে দূষণ। সেই সঙ্গে সবুজ কচুরিপানায় ঢেকেছে এই জলাশয়। দূর থেকে দেখলে বোঝা যাবে না ঘাসে ঢাকা মাঠ নাকি পানায় ভর্তি সাহেব বাঁধ।

কিন্তু কেন? কেন এই প্রাচীন শহরের ব্রিটিশ আমলে খনন হওয়া জলাশয়ের এমন বেহাল দশা? এর উত্তর বেশ দীর্ঘ। অর্থাভাবে ধুঁকতে থাকা এই পুরসভা পানা পরিষ্কার করতে করতে জেরবার হয়ে গিয়েছে। অতীতে এই সাহেব বাঁধের দূষণ ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কখনই তা সম্পূর্ণভাবে সফল হয়নি। পরিবেশ ও বনমন্ত্রকের আওতায় থাকা ন্যাশনাল রিভার কনজারভেশন ডাইরেক্টরেট (এনএলসিপি ) ১২ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকায় সাহেববাঁধ সংরক্ষণ বা সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প হাতে নেয়। কাজ হয়। কিন্তু আবার সেই আগের জায়গায় পৌঁছে যায়।

Advertisement

এর পর রাজ্য বনবিভাগের আওতায় থাকা নগর বিনোদন বনায়ন বিভাগও সংস্কার করে হাল ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দূষণ ঠেকাতে পারেনি। এই জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জলাশয় সংস্কারে নির্দেশ দিলেও তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সর্বোপরি এই শহরের মানুষজনের সচেতনতার অভাবে আজ এই জলাশয়ের এমন হাল। শুধু প্লাস্টিক, পলিথিন, থার্মোকলের থালা, বাটি, ফুল, চটি, মদের বোতল, কন্ডোম নয়। জলাশয় লাগোয়া গ্যারেজের তেল-কালি এমন কি শহর জুড়ে থাকা নানা বর্জ্য পদার্থ মিশছে এই বাঁধে। যেন ‘ডাস্টবিন’ হয়ে গিয়েছে এই জলাশয়।

Saheb-Bandh
কচুরিপানায় ভরেছে সাহেব বাঁধ

[আরও পড়ুন: স্টুডেন্ট ইন্টার্নশিপ প্রকল্পের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী, কারা সুবিধা পাবেন?]

ফি দিন প্রায় জলাশয় লাগোয়া গ্যারেজগুলি থেকে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য এই জলাশয়ে মেশায় জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ-ই কমে গিয়েছে। কারণ এই হাইড্রোকার্বন জলে মিশলে তার ওপরেই ভাসে। জলের তলায় সূর্যের আলো পৌঁছয় না। সেই জন্য জলজ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর সংখ্যা এই সরোবরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে। তাই খাবার না পেয়ে আর এই জলাশয়ের পথ মাড়াচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া, চিন, রাশিয়া, সাইবেরিয়া, পাকিস্তান থেকে আসা পরিযায়ী পাখিরা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই সরবরোরে থাকা রেসিডেন্সিয়াল বার্ডরাও সাহেব বাঁধ থেকে ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই সরোবরে কিছুক্ষণ সময় কাটালে সহজেই এখন হাতে গোনা যায় ওই পাখিদের। যা এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা ঝাপটাতো ন্যাশনাল সামার মাইগ্র্যাটরি হিসাবে পরিচিত ইন্ডিয়ান সেগ, ইন্ডিয়ান মহুরান, উয়িন্টার মাইগ্র্যাটরি গ্যাং অ্যানয়-র মত পাখিরা।

Bird
সাহেব বাঁধ থেকে মুখ ফিরিয়েছে পাখিরা

তবে জলাশয়ে পাখিদের ফেরাতে কম চেষ্টা করেনি পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কমিটি। চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি সাহেব বাঁধ বাঁচাও কমিটি। কিন্তু শেষমেষ একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিল পরিযায়ী পক্ষিকূল। আসলে এই সরোবরে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন বা বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা কমে যাওয়ায় পরিবেশগত ভারসাম্য হারাচ্ছে এই জলাশয়। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাহেববাঁধ বাঁচাও নামে আমাদের কর্মসূচি চলছে। এই জলাশয়ের হাল আমরা ফেরাবই। জলাশয়কে দূষণ গ্রাস করায় শুধু ভিন দেশ থেকে আসা পরিযায়ী পাখি নয় এই সরোবরের স্থায়ীভাবে বসবাস করা পাখিরাও অতীতের স্থায়ী বাসস্থান বদলে ফেলেছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ২০০৫ সাল থেকেই পাখি কমছে এই জলাশয়ে। এই অবস্থার জন্য শুধু প্রশাসন নয় সাধারণ মানুষেরও ভাবার সময় এসেছে।”

বার্ড লাভার তথা বার্ড ফটোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত থাকা শহর পুরুলিয়ার পিএন ঘোষ স্ট্রিটের বাসিন্দা বরুণ রাজগড়িয়া বলেন,”শুধু জলে দূষণ নয়। রাতের বেলায় যে পরিমাণ শব্দ দূষণ হচ্ছে সেই কারণেও পাখিরা তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করে নিয়েছে। তারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছে না।” অর্থাৎ এই জলাশয়ের চারপাশে হোটেল, বাড়ি, নানান খাবারের স্টল। সেই সঙ্গে সন্ধ্যা নামলেই রঙবাহারি আলো। আর সেই কারণেই মধ্যরাত পর্যন্ত যানবাহনের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে পাখিদেরও। এই সরোবরে পাখি কমতে থাকায় সাহেব বাঁধ ছুঁয়ে থাকা জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের পক্ষী নিরীক্ষণ কেন্দ্রে আর কেউ দূরবীনে চোখ দিয়ে পাখি দেখেন না। শুধুমাত্র পাখিকে ঘিরে এই জলাশয়ে যে বার্ড ট্যুরিজমের সম্ভাবনা ছিল সেটাও এখন অথৈ জলে।

দেখুন ভিডিও:

[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে বড় জয় বিলকিস বানোর, ধর্ষকদের ফিরতে হবে জেলেই]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement