ধীমান রায়, কাটোয়া: মৎস্যজীবীদের জালে আটকে একের পর এক গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যুর কারণে দ্রুত হারে কমে আসছে গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুকের সংখ্যা। বনদপ্তরের তরফে লাগাতার সচেতনতা মূলক প্রচার চালিয়েও কিছুতেই মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। তাই এবার পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ায় গাঙ্গেয় ডলফিন রক্ষায় উদ্যোগী হল বনবিভাগ৷ ডলফিনের মৃত্যু ঠেকাতে দপ্তরের তরফ থেকে ‘ডলফিন মিত্র ক্লাব’ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা বনদপ্তরের এডিএফও সোমনাথ চৌধুরী।
ওই ক্লাবে থাকবেন কাটোয়া, কেতুগ্রাম প্রভৃতি এলাকার মৎস্যজীবীরা। এছাড়া ছাড়াও এলাকার পঞ্চায়েতগুলির প্রতিনিধি, স্থানীয় বিধায়কদেরও রাখা হবে ওই ক্লাবের মধ্যে। জানা গিয়েছে, এক সময়ে কাটোয়ার ভাগিরথীতে প্রচুর গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুক দেখা যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে তারা। বর্তমানে সংখ্যাটি ৪০-এ এসে ঠেকেছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইণ্ডিয়া। উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই নাগাদ কাটোয়ায় ভাগিরথী থেকে দু’টি মৃত শুশুক উদ্ধার হয়েছিল। ডলফিনগুলির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বন দপ্তর জানতে পারে আঘাত জনিত কারনেই মৃত্যু হয়েছে ডলফিন দুটির। মূলত জালে আটকে পড়ে ডলফিনগুলি আঘাত পেয়েছিল বলে দাবি বনবিভাগের। স্থানীয় ও বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাগীরথীতে মাছ ধরার জন্য মৎস্যজীবীরা যে জাল ব্যবহার সেটি খুব শক্ত ও সরু সুতোয় তৈরি। স্থানীয় ভাষায় ওই জালগুলিকে ‘ইলেট্রিক জাল’ বলা হয়। জালগুলি এতটাই নিখুঁত যে অতি ছোট মাছ পর্যন্ত বেরোতে পারে না।
সোমনাথ চৌধুরী আরও বলেন, ‘‘ওই জালের ফাঁদে পড়েই একের পর এক ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে। ডলফিনের সংখ্যা কমতে কমতে আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলার মতো।’’ তবে কাটোয়ার শাঁখাই মৎস্যজীবী সংগঠনের সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র বর্মনের দাবি, ‘‘স্থানীয় জেলেরা ইলেট্রিক জাল ব্যবহার করে না। বাইরের জেলেরা এসে ওই জাল ব্যবহার করে মাছ ধরে ভাগিরথীতে।’’ প্রসঙ্গত, একের পর এক ডলফিনের মৃত্যুর পর সচেতনতামূলক প্রচারের উপর জোর দিয়েছিল বনদপ্তর। বছর খানেক আগে রাজ্যে দপ্তরের তরফ থেকে কাটোয়ার শাঁখাই ঘাটে গাঙ্গেয় ডলফিন সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল। চলছিল লাগাতার সচেতনতামূলক প্রচার। বিশেষ করে ‘শুশুক পয়েন্ট’ বলে পরিচিত কাটোয়ায় অজয় ভাগিরথীর সংযোগস্থল এলাকাটিতে কড়া নজর রাখতে শুরু করেছিল বনদপ্তর। তা সত্ত্বেও গাঙ্গেয় ডলফিনের মৃত্যু রোধ করা যায়নি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সালে ১০০-এর উর্ধে কাটোয়ায় ডলফিন দেখা গেলেও বর্তমানে তা অর্ধ শতকের নিচে নেমে এসেছে। আজ রবিবার ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট এন্ড ইণ্ডিয়ার দুই সমীক্ষক কেতুগ্রামে এসেছিলেন ডলফিনের মৃত্যুর কারন খুঁজতে। তাঁরা মৎস্যজীবীদের সঙ্গে এই বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। সমীক্ষক দলের সদস্য রূপম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাটোয়ায় গাঙ্গেয় ডলফিনের দ্রুত হারে সংখ্যা কমে যাওয়ার কারন অনুসন্ধান করছি আমরা।’’
এর আগে শনিবার কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরে মৎস্যজীবীদের নিয়ে বৈঠক করেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। বৈঠকে দপ্তরের আধিকারিক, মৎস্যজীবী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ, জেলা পরিষদের বনভূমি কর্মাধক্ষ্য শ্যামাপ্রসন্ন লোহার প্রমুখ। ওই বৈঠকেই ‘ডলফিন মিত্র ক্লাব’ গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এডিএফও সোমনাথ চৌধুরী বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে কোনও মৎস্যজীবির জালে ডলফিন আটকে গেলে তারা সঙ্গে সঙ্গে বনদপ্তরকে খবর দেবেন।’’ মৎস্যজীবীদের জাল ছিঁড়ে গেলে বন দফতরের তরফ থেকে তাঁদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.