গৌতম ব্রহ্ম: আবেগ ও সদিচ্ছার সঙ্গে প্রযুক্তির জাদুর মিশেল। দু’য়ে মিলে টেনে তুলল ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে। আমফানে (Amphan) উপড়ে গিয়েছিল সত্তর বছরের পুরনো অশ্বত্থগাছ। কেটেও ফেলা হয়েছিল তার প্রায় ৯০ শতাংশ। সেই মরে যাওয়া অশত্থই ফের মাথা তুলল কাঁকুড়গাছি ইএসআই হাসপাতালে (Kankurgachi ESI Hospital)। সৌজন্যে বিজ্ঞান এবং হাসপাতালের সুপার-সহ কর্মীদের একাংশের বৃক্ষপ্রেম। শনিবার দিনভর চেষ্টার পর গাছটিকে হাসপাতাল চত্বরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে আগের অবস্থানের থেকে দু’ফুট এগিয়ে।
কাঁকুড়গাছি ইএসআইয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী হয়ে জড়িয়ে সত্তরোর্ধ্ব অশ্বত্থ। যার গুঁড়িতে মাথা ঠুকে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা হাসপাতাল থেকে বেরোতেন। কত রোগীর পরিবারের মানত ঢিল হয়ে ঝুলে ছিল তার ডালে ডালে। কত দীর্ঘশ্বাস, কত কান্না, কত আরোগ্য লাভের উচ্ছ্বাসের সে সাক্ষী। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে সেই প্রিয় গাছ উলটে পড়ায় সবারই মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। বিশেষত পুরনো কর্মীদের।
মহাবৃক্ষটি হাসপাতালের জন্মেরও অন্তত ২০ বছর আগের! বস্তুত এহেন ঐতিহ্যের গায়ে যাতে কোনও চোট না লাগে, সে জন্যই হাসপাতাল ভবন তৈরি হয়েছিল কিছুটা বেঁকিয়ে। হাসপাতালের সুপার ডা. ময়ূখ রায়ের কথায়, “অশত্থগাছটি ঝড়ের আঘাতে আমার গাড়ির উপরই আছড়ে পড়েছিল। উইন্ডস্ক্রিন চৌচির হয়ে যায়। গাছটা মারা গিয়েছে ধরে নিয়েই কেটে ফেলা হয়। কিন্তু জুনের ১২ তারিখ নাগাদ দেখি, নতুন ডাল, পাতা বেরিয়েছে।”
তারপরই রবীন্দ্র সরোবরে গাছ প্রতিস্থাপন করা একটি এজেন্সিকে খবর দেওয়া হয়। ওরাই দু’ফুট এগিয়ে নিয়ে গাছটিকে প্রতিস্থাপন করেছে।
প্রথমে ক্রেন দিয়ে গাছটিকে তোলা হয়। শিকড় থেকে মাটি পরিষ্কার করে দেওয়া হয় ফাইটো হরমোন। তারপর জেসিবি দিয়ে খোঁড়া হয় বড় গর্ত। সেখানেই নতুন করে রোপণ করা হয়েছে সত্তর বছরের প্রবীণ বৃক্ষকে। সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টা।
ময়ূখবাবু জানান, “ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. রাজীব গণচৌধুরি সারাক্ষণ ছিলেন। প্রতিস্থাপনের জন্য ৩০ হাজার টাকা দরকার ছিল। নেফ্রোলজিস্ট ডা. জয়ন্ত রায় পুরো টাকাটাই দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আর দরকার হয়নি। চাঁদা তুলেই টাকা উঠে যায়।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.