সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: গোটা বিশ্বজুড়ে কমে যাচ্ছে শকুন। ফলে বাস্তুতন্ত্রে তার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এক দশক আগে অন্তত চার কোটি শকুন এ দেশের আকাশে উড়ে বেড়াত, এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র প্রায় পাঁচ হাজারে। এই সংখ্যা ভয়ঙ্কর ভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে ভুরু কুঁচকেছে পরিবেশ প্রেমীদের। তাই শকুন বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকারও।
এই আপাতঘৃণ্য কিন্তু পরিবেশের পক্ষে ভীষণ রকম উপকারী পাখিটিকে মারাত্মক বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় সংযোজিত করে কিছুটা হলেও তার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে নানা রকম উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রবিবার শিলিগুড়িতে রামকিঙ্কর প্রদর্শনী কক্ষে ‘শকুন বাঁচাও’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে হিমালায়ন নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন এবং বোম্বে ন্যাচরাল হিস্ট্রি সোসাইটির তরফে এবং রাজ্য বন দপ্তরের সক্রিয় সহযোগিতায় এই আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে শকুন বাঁচাতে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির নির্দেশক শচীন রাণাডে সমস্যার বিষয়ে আলোকপাত করেন। জানান, শকুনের সংখ্যা কমতে থাকায় পচনশীল জন্তু-জানোয়ারের দেহ খাচ্ছে কুকুর, কাক। ফলে কুকুরের দল হিংস্র হয়ে উঠছে। যা নাগরিকদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি বেশিদিন পড়ে থেকে প্রাণীর দেহ পচে তা থেকে বিপজ্জনক রোগ ছড়াচ্ছে।
রাজ্যের তরফে ইতিমধ্যেই সমস্যার বিষয়টি অনুধাবন করে আলিপুরদুয়ারের রাজাভাতখাওয়াতে তৈরি হয়েছে দেশের দ্বিতীয় শকুন সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র। সেখানে এই মুহূর্তে ১৩০টি শকুন রয়েছে। আরও ৬টি শকুন ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সৌম্য চক্রবর্তী। শকুন খাবার খুঁজতে বের হয়ে দিনে একশো কিলোমিটার যেতে পারে। এই প্রবণতা ও সক্ষমতার কথা মাথায় রেখে রাজাভাতখাওয়া থেকে একশো কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মোট এলাকা প্রায় ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার।
এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকার সঙ্গে, অসম, মেঘালয় এবং বাংলাদেশ ও ভুটানের কিছুটা অংশ পড়েছে। এই এলাকার মধ্যে শকুনের বসবাসযোগ্য এলাকা তৈরি করা হচ্ছে। শকুন বছরে একটি ডিম দেয়। ফলে শকুনের সংখ্যা বাড়ানোর গতি প্রক্রিয়া যথেষ্ট ধীর। মূলত গবাদি পশুর শরীরে এক ধরণের পেনকিলার ইঞ্জেকশন দেওয়া হতে, যা খেয়ে শকুন বাঁচতে পারত না। বর্তমানে ওই ওষুধ নিষিদ্ধ করে বিকল্প ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তাতে কিছুটা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন সৌম্যবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.