ছবি: প্রতীকী
গৌতম ব্রহ্ম: চমকে ওঠার মতো তথ্যই বটে! দেশে ফি বছর সর্পাঘাতের মুখোমুখি হয় ৩০-৪০ লক্ষ মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ৫০-৬০ হাজার মানুষ। যা বিশ্বে সর্বোচ্চ! সোমবার সংসদে পেশ হওয়া এই তথ্য সবাইকে চমকে দিয়েছে। একটি স্বনামধন্য জার্নাল ‘ইলাইফসায়েন্স’-ও একই তথ্য দিচ্ছে। জানাচ্ছে, সর্পাঘাতে গড়ে ৫৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় ভারতে। আর গোটা বিশ্বে ১০ হাজারেরও কম! কাকতালীয় হলেও সর্পাঘাতে মৃত্যু নিয়ে দুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, আঞ্চলিকভাবে সংগৃহীত বিষ থেকে অ্যান্টি স্নেক ভেনাম তৈরি হচ্ছে না বলেই মৃত্যুর হার এত বেশি! সেই অর্থে সর্পাঘাত মিলিয়ে দিয়েছে লোকসভা ও বিধানসভাকে!
সর্পাঘাতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্পাঘাতের পর একটা বড় অংশের রোগী এখনও হাসপাতালে না গিয়ে ওঝা-গুনীনের কাছে যায়। সেই মৃত্যুগুলি ‘রিপোর্টেড’-ই হয় না। তাই প্রকৃত সংখ্যাটা জানার উপায় নেই। এমনটাই জানিয়েছেন সর্পাঘাতের পরিসংখ্যান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া প্রিয়াঙ্কা কদম।
কিন্তু কেন এত মৃত্যু? সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
তাঁর পর্যবেক্ষণ, আঞ্চলিকভাবে বিষ সংগ্রহ না করে অ্যান্টি স্নেক ভেনাম (এএসভি) তৈরি করার জন্যই মৃত্যু এত বেশি। তামিলনাড়ুর সাপের বিষ থেকে তৈরি করা এএসভি পশ্চিমবঙ্গে কাজ করছে না। একই বক্তব্য দেশের তাবড় সর্প বিশেষজ্ঞেরও। সর্পাঘাতের চিকিৎসা প্রোটোকল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদার। তিনিও এএসভি তৈরির জন্য আঞ্চলিকভাবে বিষ সংগ্রহ করার দাবি তুলছেন। আসলে, সর্পাঘাত চিকিৎসার একটি ‘থাম্ব রুল’ আছে। সর্পাঘাতের ১০০ মিনিটের মধ্যে রোগীর শরীরে ১০ ভায়াল এভিএস প্রবেশ করাতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।
কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, ২৫-৩০ ভায়াল এভিএস দিয়েও রোগীকে সুস্থ করা যাচ্ছে না। ১০০ ভায়াল এভিএস দিয়ে রোগীকে সুস্থ করা হয়েছে, এমন নজিরও আছে। এরক ফলে একদিকে যেমন রোগীর মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার টাকাও নষ্ট হচ্ছে। আঞ্চলিকভাবে সংগৃহীত বিষে এএসভি তৈরি হলে এই সমস্যা হত না। আগে বেঙ্গল কেমিক্যালে এএসভি তৈরি হত। সাপের বিষ ঘোড়ার শরীরে প্রবেশ করিয়ে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই ইনজেকশন তৈরি করা হত। কিন্তু সই সব অতীত। পশ্চিমবঙ্গে এখন আর এএসভি তৈরি হয় না। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থাকে সর্পবিষ সংগ্রহের অনুমতি দিলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তারা এখনও কাজ শুরু করেনি। ফলে, ফি বছর সাপের ছোবলে বহু প্রাণ অকালে ঝরে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.