সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রযুক্তি আছে। সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করে অনুমতিও দিয়েছে প্রায় ৭ বছর আগে। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই পশ্চিমবঙ্গের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। যার জেরে এখানকার বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলিতে দূষণের মাত্রা কমছে না। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (CREA) সমীক্ষায় এমনই জানিয়েছে। ফলে দিকনির্দেশ সত্ত্বেও লাভ হচ্ছে না। অথচ দূষণ ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে দাবি সংস্থার।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন সালফার ডাই-অক্সাইডের (SO2), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO2) এবং পারদের মতন দূষিত পদার্থের অপসারণের জন্য এবং পারটিকুলেট পদার্থের (PM) বা সূক্ষ্মতর ধূলিকণার অপসারণ কমাতে ভারতের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলির জন্য প্রথম ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ মানক নিয়ে আসা হয়। রাজ্যে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ কমানোয় গত সাত বছর ধরেই ব্যর্থ কর্তৃপক্ষ। যেহেতু রাজ্য সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল, তাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষজনের স্বাস্থ্যের উপর কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে তৈরি হওয়া দূষণের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে ৪০ শতাংশ এখনও পর্যন্ত Flue gas desulphurization বা এফজিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নিয়ে উঠতে পারেনি। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি এন্ড ক্লিন এয়ারের একটি রিপোর্টে এমনই তথ্য মিলেছে। শুধু তাই নয়, বাকি ৬০ শতাংশ উৎপাদন ইউনিটও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দূষণে অপসারণ প্রযুক্তির প্রয়োগ করে উঠতে পারেনি।
কয়লা চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির দূষণ শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং বাতাসের মাধ্যমে এই দূষণ বহুদূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম। এবং এই দূষিত বাতাস সকলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত শিশু, বয়স্ক এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দূষণ ভীষণভাবে ক্ষতিকারক। কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট ১৩৬৮৬ মেগাওয়াটের মধ্যে গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত কোনও বড় ইউনিটই এখনও পর্যন্ত এফজিডি (যা কিনা সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস অপসারণ করতে কাজে লাগে) বা ডাইরেক্ট সরবেন্ট ইনজেকশন (ডিএসআই) প্রযুক্তি, যা কিনা সালফার ডাই-অক্সাইডের অপসারণ নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগে, তা লাগিয়ে উঠতে পারেনি। সর্বসাকুল্যে মোট ৭৪৮০ মেগাওয়াট ইউনিট এখনো পর্যন্ত এফজিডি লাগানোর জন্য বিড দেওয়া হয়েছে এবং মোট ৫১০ মেগাওয়াট ইউনিটকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা কিনা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কাজেই এই সব ইউনিটগুলিকে সালফার ডাই-অক্সাইডের অপসারণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এফজিডি প্রয়োগ সংক্রান্ত পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী নথি এবং বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র সবগুলিতেই বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করার জন্য ১৮ থেকে ৩৬ মাসের মতো সময় লাগে। এর অর্থ হল, কেন্দ্রীয় প্রকল্প মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাত ও আট নম্বর ইউনিট, দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের এক ও দু’নম্বর ইউনিট এবং রঘুনাথপুরের এক এবং দু’নম্বর ইউনিট যারা ২০১৯ সালের জুলাইতে বিড দিয়েছিল তার সবকটিই এই সময়সীমা (১৮ থেকে ৩৬ মাসের) অতিক্রান্ত করেছে। এবং শুধু তাই নয়, রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রযুক্তি প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কাজগুলিও হয় দেরি হয়েছে অথবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যার ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তি হচ্ছে।
মেজিয়ার এক থেকে ছয় নম্বর ইউনিটে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এফজিডি চালু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে এই সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে খুবই ধীর গতিতে এগোচ্ছে এবং এই পুরো পদ্ধতির গতিবিধিতে সার্বিকভাবে স্বচ্ছ তার অভাব রয়েছে, যা কিনা আরও বিলম্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যেখানে এই প্রযুক্তি লাগানোর ঊর্ধ্বসীমা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এনটিপিসি নিয়ন্ত্রণাধীন ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০২০ সালের মে মাসে প্রদান করা হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.