অভিরূপ দাস: ঘুঁটেতেই সব শেষ। গল্পকথা নয়, ঘোর বাস্তব। গোরুর বিষ্ঠা শুকিয়ে যে গোবর, তা দিয়েই পোড়ানো হচ্ছে মানুষের মৃতদেহ। কাঠের বদলে চিতার বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসাবে কদর এতটাই যে, চাহিদা মেটাতে নাজেহাল অবস্থা গোশালার। শ্মশানে শবদাহের জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশাপাশি সাবেক চিতারও বন্দোবস্ত আছে। ধর্মীয় এবং নানাবিধ সংস্কারের কারণে অনেকেই চিতায় পরিজনের দেহ পোড়াতে চান। কিন্তু কাঠপোড়া ধোঁয়া দূষণের সৃষ্টি করে। সেই সমস্যার সুরাহায় কাঠের বদলে ঘুঁটে ব্যবহারের চিন্তা। তাতে যথেষ্ট সুফলও মিলছে, শ্মশান চত্বরে দূষণে রাশ পড়ছে ভালমতো।
আপাতত কলকাতায় (Kolkata) শুধুমাত্র নিমতলা মহাশ্মশানেই হয়েছে পরিবেশবান্ধব মরা পোড়ানোর এই ব্যবস্থা। কাঠের পাশাপাশি, ঘুঁটেতে চিতা জ্বালানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুরসভা। প্রিয়জনের দেহ নিয়ে যাঁরা আসেন তাঁদের কাছে বিকল্প দেওয়া হয়, ‘‘ঘুঁটেতে জ্বালাবেন?’’ শ্মশানের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সকলেই রাজি হয়ে যাচ্ছেন। অবস্থা এমন, ঘুঁটের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না।
কাঠের তুলনায় ঢের বেশি পরিবেশবান্ধব ঘুঁটে। কাঠের ধোঁয়ায় বাতাসে ক্ষতিকর দূষিত কণা বৃদ্ধি পায়। সেদিক থেকে অনেকটাই নিরাপদ ঘুঁটে। গত একমাসে প্রায় দেড়শো মৃতদেহ পুড়েছে ঘুঁটেতে। পুরসভার মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, আপাতত নিমতলা শ্মশানেই (Nimtala Ghat) চলছে কর্মকাণ্ড। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রেরণা ফাউন্ডেশন নামে এক বেসরকারি সংস্থাকে। প্রেরণা ফাউন্ডেশনের মনোজ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঘুঁটের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। বিশেষ করে অবাঙালিদের মধ্যে ঘুঁটেতে মৃতদেহ পোড়ানোর চাহিদা মারাত্মক। কেন এমনটা? মনোজবাবুর কথায়, গরুকে দেবতা হিসাবে দেখেন অনেকেই। গরুর গোবরের ঘুঁটেতে মরা পোড়ানোকে পবিত্র মনে করেন।
এত ঘুঁটে আসে কোত্থেকে? সাত হাজার গরু রয়েছে ক্যালকাটা পিঁজরাপোল সোসাইটির। তার মধ্যে ১২৫০টি গরু রয়েছে লিলুয়া গোশালায়। সেখান থেকেই প্রতি সপ্তাহে ঘুঁটের গাড়ি ঢোকে নিমতলায়। সাধারণত ফি-হপ্তাহে পাঁচ গাড়ি ভর্তি ঘুঁটে আসে নিমতলায়। লিলুয়া গোশালার আধিকারিক শত্রুঘ্ন বিসওয়ালের কথায়, এখন শীতকাল। রোদের তাপ কম। যে কারণে গোবর শুকোতে সময় লাগছে। ঘুঁটের পরিমাণ কমে গিয়েছে। সাধারণত ৬০ বস্তা ঘুঁটে ফি-হপ্তায় পৌঁছে যায় নিমতলা শ্মশানে। এখন তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ বস্তার মতো। ফের গরম পড়লেই ঘুঁটের সংখ্যা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিমতলা শ্মশানের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কাঠে পোড়াতে যা খরচ ঘুঁটেতেও তাই। একেকটা দেহের জন্য ২৩৫০ টাকার ঘুঁটে লাগে। সেই টাকা আবার পৌঁছে যায় লিলুয়া গোশালাতেই। তা দিয়ে কেনা হয় গবাদি পশুর খাবার। পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থাপনায় পুরো সিস্টেম চলছে। ঘুঁটে থেকে যে আয় হচ্ছে তা দিয়েই কেনা হচ্ছে গরুর খাবার। আগামী দিনে শহরের অন্যান্য শ্মশানেও এই ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.