Advertisement
Advertisement

জলেও বেঁচে থাকে কোভিড, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

ক্ষুদ্রান্ত্রেও আক্রমণ করতে পারে নোভেল করোনা ভাইরাস।

Coronavirus can survive in water, shows new research
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:April 15, 2020 10:35 am
  • Updated:April 15, 2020 10:35 am  

প্রীতিকা দত্ত: হ্যান্ডশেক নয়। করোনা ভাইরাস হাতে লেগে থাকে। মাস্ক পরুন। অন্যের হাঁচি-কাশির ড্রপলেটস যেন নিশ্বাসে না মেশে। করোনা বাতাসবাহিতও হতে পারে। তাই একে অন্যের থেকে সামাজিক দূরত্ব বাড়ান।এর পর কী? এবার জানা গেল, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস জলবাহিতও।

সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অন্তত তেমনটাই জানান দিচ্ছে। গবেষণায় জানা গিয়েছে, নিকাশি জলে বেশ ভাল মতো বেঁচে থাকে সার্স-কোভ-২। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: করোনার সংক্রমণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারে এপ্রিলের শেষে! আশঙ্কা বিশেষজ্ঞের]

নেদারল্যান্ডসের কে ডব্লু আর ওয়াটার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে এক গবেষক লিখেছেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকার মতো দেশে যেখানে প্রায় দশ লক্ষের কাছাকাছি মানুষের বাস, সেই এলাকার জলের স্যাম্পেল ফাইল করে গবেষণা চালানো হয়। রোজকার হাতমুখ ধোয়ার পর ব্যবহৃত জল, শৌচকাজের জলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়।

শুধু মুম্বইয়ে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাভিই উদাহরণ হতে যাবে কেন! গোটা পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা দেখলেও ভয় বাড়বে। এখানে অন্ত্যেবাসী, বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা অগুনতি। করোনার জেরে ওঁদের গোটা যাপনটাই প্রশ্নের মুখে। দিকে দিকে কোভিড সংক্রমণের গ্রাফটাই জনস্বাস্থ্যের আসল চেহারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বলে মেনে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও বলছে, নোভেল করোনাভাইরাস বাতাসবাহিত হতে পারে। তাই ছ’ফুট নয়, দরকার ১৩ ফুটের দূরত্ব। কারণ, হাঁচির সঙ্গে বেরনো ড্রপলেটস (থুতু) বাতাসে ভেসে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এবং মাটিতে পড়ে। ভাইরাস জুতোর সঙ্গে ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে। তাতেই যা ক্ষতি করার করে দিচ্ছে করোনা। এতটাই শক্তি এই নোভেল করোনার। এমন একটা সময় করোনা ‘জলবাহিত’ বললে চিন্তা বাড়ে বইকি!

কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির ইনফেকসাস ডিজিস অ্যান্ড
ইমিউনোলজি বিভাগের সায়েন্টিস্ট-অধ্যাপক ড. শুভজিৎ বিশ্বাসও জানালেন, “নিকাশি জলের মাধ্যমে কোভিড-১৯ সংক্রামিত হতে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

এখানেই শেষ নয়। শুভজিৎবাবুর কথায়, “কোভিড সংক্রমিত মানুষের মল থেকেও ছড়াতে পারে এই রোগ। যদিও সংক্রমণের ভাগ পরীক্ষা সাপেক্ষ। তবে ই-লাইফের সাম্প্রতিকতম গবেষণায় জানা গিয়েছে, কোভিড পজিটিভের এক গ্রাম মলে রয়েছে কোভিডের ১০০ মিলিয়ন আরএনএ। সংখ্যাটা কিন্তু কোনও অংশে কম নয়। ড্রেনের জলে মিশে থাকা সংক্রামিত রোগীর মল যে কত জনকে সংক্রমিত করতে পারে, তা কেউ জানেন না। এই ক্ষেত্রে আরও গবেষণার দরকার।” তিনি আরও জানান, জ্বর-সর্দি-গলাব্যথা সঙ্গে পেটখারাপও কিন্তু একটা বড় লক্ষণ কোভিড সংক্রমণের।

[আরও পড়ুন: ওজোন স্তরে বড়সড় ছিদ্র, করোনা আতঙ্কের মাঝে পরিবেশ নিয়ে নতুন উদ্বেগ]

কথাটা মেনে নিয়েছেন কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ডা. অমিতাভ নন্দী। সংবাদ প্রতিদিন-কে তিনি জানান, কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-ই – সবই জলবাহিত রোগ। শুধু ফুসফুস, শ্বাসনালি নয়, নোভেল করোনা ভাইরাস ক্ষুদ্রান্ত্রেও আক্রমণ করতে পারে। কোনও কোনও করোনা রোগীর শরীরে তখন ডায়েরিয়ার উপসর্গ স্পষ্ট হয়।

করোনা যে পুরোপুরি নতুন রোগ, তা নয়, জানাচ্ছেন ড. বিশ্বাস। তিনি বলেন, “কুকুরের দেহে ক্যানাইন করোনা ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে। এমনকী, শুয়োরের ক্ষেত্রে ট্রান্সমিসেবল গ্যাস্ট্রো এন্টারাইটিস ভাইরাসের খোঁজও পেয়েছি আমরা। তবে সেটা আলফা করোনা। এখনকার নোভেল করোনা ভাইরাস আলফা নয়, বিটা। যে কারণে ভ্যাকসিন খোঁজার এত মরিয়া চেষ্টা।”

তবে এমন পরিস্থিতিতে প্রবীণ ভাইরোলজিস্ট ডা. অমিতাভ নন্দী বলছেন, “নিজের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির আশপাশটা পরিষ্কার রাখুন। নিকাশির জল জমতে দেবেন না। নোংরা পরিবেশে যেমন থাকতে পারে করোনা ভাইরাস, তেমনই কোভিড থাকতে পারে মলদ্বারেও। যেটা হয় ক্ষুদ্রান্ত্রে সংক্রমণের কারণে। তাই শৌচকর্মের সময় শুধু হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ছেড়ে দেবেন না। জীবাণুনাশক লিকুইড সোপ দিয়ে পায়ুদ্বারও পরিষ্কার করুন। নাহলে জামাকাপড় বা বসার জায়গা থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement