গৌতম ব্রহ্ম: এ যেন রূপকথা! এক টিকাতেই ঘায়েল করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) সব অবতার!
তা সে হালের ওমিক্রন হোক, কিংবা প্রাণঘাতী ডেল্টা প্লাস। এমনকী ‘নিউকোভ’–এর মতো করোনার অনাগত অবতারদেরও ঠেকিয়ে দিতে পারবে এই টিকা (Corona vaccine)। এমনই দাবি করলেন বাংলার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল প্রাণীবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তাঁদের দাবি, সফ্টওয়্যার ও ইন-সিলিকো নির্ভর প্রযুক্তিতে পারদর্শিতা দেখিয়েছে এই টিকা ফর্মুলা। এখন শুধু টিকা নির্মাতাদের এগিয়ে আসার অপেক্ষা।
রূপকথার এমন হাইব্রিড টিকা ফর্মূলা উপহার দিল আসানসোলের (Asansol) কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। সঙ্গী হয়েছে ভুবনেশ্বরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’। সব মিলিয়ে পাঁচ সদস্যের গবেষক দল। কেএনইউ–র সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়, অভিজ্ঞান চৌধুরী, আইআইএসইআর–এর মলয়কুমার রানা, সরোজ কুমার পান্ডা, পার্থসারথী সেনগুপ্ত। সম্প্রতি এই টিকা–ফর্মুলা প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববন্দিত এলসিভিআর জার্নালে। তারপরই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন। তবে কী আসানসোলের ফর্মুলাতেই স্ট্রেন নিয়ে দুশ্চিন্তার যবনিকা পতন হবে?
অতিমারীর শুরুর সময় থেকে একাধিক অবতারে আবির্ভূত হয়েছে করোনা। আলফা স্ট্রেন দিয়ে শুরু। তারপর একে একে এসেছে বিটা, গামা, ডেল্টা, ডেল্টা প্লাস, মিউ, আর-১। এপসিলন, থিটা, জেটার মতো স্ট্রেনেরও সন্ধান মিলেছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এগুলিকে সেভাবে মান্যতা না দেওয়ায় প্রচারের আলোয় আসেনি।
আসলে যখনই নতুন কোনও স্ট্রেনের হদিশ মেলে তখনই অবধারিতভাবে যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হল, টিকা কী কাজ করবে এর বিরুদ্ধে? ডেল্টা, ডেল্টা প্লাস, ওমিক্রন – সব ক্ষেত্রেই এই প্রশ্ন উঠেছে। নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হয়েছে ভ্যাকসিনগুলিকে। ট্রায়ালে কেউ লেটার মার্কস পেয়েছে। কেউ আবার টেনেটুনে পাস করেছে। ডেল্টার কথাই ধরা যাক। করোনার এই স্ট্রেনের বিরুদ্ধে ফাইজারের (Pfizer) টিকা কার্যকর হয়েছিল ৮৮ শতাংশ। অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা ৬০ শতাংশ। প্রথম ডোজের পর তিন সপ্তাহ পর অবশ্য দু’টো টিকারই কার্যকারিতা নেমে এসেছিল ৩৩ শতাংশে। ওমিক্রনের (Omicron) ক্ষেত্রেও টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই পরস্থিতিতে বাংলার গবেষকদের হাইব্রিড (Hybrid) টিকা ফর্মুলা ‘মাস্টার কি’ বলেই মনে করছেন ভাইরোলজিস্টরা। গবেষকদলের প্রধান তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইম্মুনো-ইন্ফর্ম্যাটিক্স প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের অপরিবর্তনশীল অংশের গঠন মোতাবেক পেপটাইড ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। এটি একাধারে সুস্থিত, রোগ প্রতিরোধী ও এলার্জির মত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রহিত। টোল-লাইক রিসেপ্টর-৪ এবং এমএইচসি-১ ও-২ এর সাথে আন্ত:ক্রিয়ায় উপযোগী হওয়ায় টিকাটির গুণমান বেশি হওয়ার কথা।”
যদিও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটি আপাতত সফটওয়্যার ও ইন-সিলিকো নির্ভর প্রযুক্তিতে পারদর্শিতা দেখিয়েছে। এই টিকা বাস্তবে কতটা সফলতা পাবে তা নির্ভর করছে প্রাণী ও মানুষের উপর করা ট্রায়ালের ফলাফলের উপর। সেদিকেই নজর থাকবে। চিকিৎসকদের দাবি, আদতে এই টিকাকে ইম্মুনিটি তৈরির কোষসমূহ ও তাদের কার্যকলাপের কোষ্ঠী বিচারে উত্তীর্ণ হতে হবে। তবেই তা সামগ্রিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.