পূর্বস্থলীর চুপি জলাশয়ে কচুরিপানা।
অভিষেক চৌধুরী, কালনা: শীত পড়তেই পর্যটন কেন্দ্র চুপির পাখিরালয় ও পার্ক সংলগ্ন এলাকায় ঝাঁক-ঝাঁক পরিযায়ীদের ভিড় থাকে ছাড়িগঙ্গার বিস্তীর্ণ জলাশয়ে। পর্যটকদের কাছে যা খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু বর্তমানে কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় সেই জলাশয় যেন তার ‘শ্রী’ হারাতে বসেছে। ঠান্ডা পড়তেই পরিযায়ীরা আসতে শুরু করেছে। তবে জলাশয়ে ভরা কচুরিপানার ভিড় ঠেলে নৌকা করে পর্যটকদের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়াটা দুঃসাধ্যের হয়ে উঠেছে নৌকার মাঝিদের। এই কারণে পর্যটকরাও এই সফরকে সুখকর করে তুলতে পারছেন না। তাঁরা নৌকাবিমুখ হওয়ায় মাঝিদের আয় কমেছে। মাথায় হাত মাঝিদের। যদিও শীঘ্রই নমামি গঙ্গে প্রকল্পে কচুরিপানা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চুপি কাষ্ঠশালি এলাকা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক জায়গা। কারণ সেখানে ছাড়িগঙ্গার বিশাল জলাশয়ের পাশাপাশি গাছগাছালিতে ভরা মনোরম পরিবেশ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে পাখিরালয় ও পার্ক। শীত পড়তেই বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ীরা সেখানে ভিড় করে। খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ ওই জলাশয়ে বিচরণ করতে দেখা যায় হাঁস প্রজাতির পরিযায়ীদের। এছাড়াও দেখা মেলে রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, কটন টিল, ব্ল্যাক আইরিশ, অস্পে, মুরহেন, লেসার হুইসলিং, লিটল গ্রিবের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ীদের। তাদের দেখতে ক্যামেরা হাতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। নৌকাবিহারের পাশাপাশি তাঁরা পিকনিকও করেন সেখানে। স্বাভাবিক কারণেই লক্ষ্মীলাভ হয় স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
পাখিরালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মরশুমে হালকা ঠাণ্ডা পড়তেই পরিযায়ী ও পর্যটকরা আসতে শুরু করলেও জলাশয়ে কচুরিপানা থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা প্রদীপ পারুই বলেন, ‘‘বেশ কিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। পর্যটকদের নৌকাবিহারে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাতে নৌকার মাঝিদের আয়ও কমে গিয়েছে। পর্যটক ও পরিযায়ীদের সংখ্যাও যেন কমতে শুরু করেছে। তবে কচুরিপানা সরিয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
বীরভূমের বোলপুর থেকে আসা পর্যটক পার্বতী রায় বলেন, ‘‘এখানে অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। এর আগেও এসেছি। কিন্তু এবার এসে দেখলাম জলাশয় পানায় ভরে গিয়েছে। পাখি দেখতে খুব কষ্ট করে মাঝিদের ওই জলাশয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে।” একই বক্তব্য উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত থেকে আসা মিঠু বিশ্বাসদেরও। নৌকা মাঝি শঙ্কর পারুই, গাইড পীযূষ হালদার বলেন, ‘‘অতিরিক্ত কচুরিপানার জেরে নৌকা চলাচলে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। পর্যটকরা আসতে শুরু করলেও এইকারণে অনেকে এসেও বিমুখ হচ্ছেন। এই মরসুমে আমাদের ভালো আয় হলেও সেই আয় হচ্ছে না। তাই কচুরিপানা সংস্কার না হলে আরও সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের।”
স্থানীয় পক্ষী বিশারদ সঞ্জয় সিনহা বলেন, ‘‘এখানে যেসব পরিযায়ী পাখি আসে বেশীরভাগই তারা হাঁস প্রজাতির। অতিরিক্ত কচুরিপানা থাকলে তারা ঠিকমত বিচরণ করতে পারে না। শ্যাওলা, পাতাঝাঁজির মত বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের মত খাবার অনেক পাখি সংগ্রহ করতে পারবে না। এই কারণে তারা চলে যেতে বাধ্য হবে। কিছু পাখি কচুরিপানা থেকে খাবার সংগ্রহ করলেও তা একটা নির্দিষ্টমাত্রায় থাকা দরকার। অতিরিক্ত নয়।’’জেলা বনাধিকারিক সঞ্চিতা শর্মা বলেন, ওই জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার করার জন্য ২টি প্রোপোজাল পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই তা পরিষ্কার করা হবে। এছাড়াও নমামি গঙ্গে প্রকল্পে প্রোপোজালের অনুমোদন পেলেও তা করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.